মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আশাশুনির একমাত্র বালিকা বিদ্যালয়টিকে এমপিওভুক্ত করুন!
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
জাতিসংঘভুক্ত ইউনিসেফের বিবেচনায় বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। তথাপি সমানাধিকারের ক্ষেত্রে আরো পথচলা বাকি। বিশেষ করে মেয়েদের গুণগত ও অপরিহার্য জ্ঞানস্তরে উত্তরণ এবং বেঁচে থাকার সক্ষমতায় নারী ও মেয়েদের অবস্থান সমুন্নত হওয়া জরুরি।
ওই বিবেচনায় উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার পূর্বকাদাকাটির জে. কে. টি. নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি গত এক যুগের উপর কিভাবে চলছে, তা এক অমূল্য উপাখ্যান বটে। বিস্ময় জাগানোর মতো ২০০৪ সালে ওই গ্রামের তিন জন কৃষকের দেড় বিঘার বেশি অনুদানের জমিতে এবং হিতৈষী এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তা সচল রয়েছে। তবু দূর প্রবাস থেকে সেটির উপলব্ধি কষ্টসাধ্য বৈকি! আত্মনিবেদিত প্রাণের উচ্ছ্বাসে বিনা বেতনে ১০ জন শিক্ষক ও ২ জন শিক্ষয়িত্রী শিক্ষার আলোকবর্তিকাটি শতধারায় প্রজ্জ্বলিত করছেন। প্রায় ২-৩ কিলোমিটার দূরবর্তী অঞ্চলের মেয়েরা সেখানে জ্ঞান লাভের আশায় যায়। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকেই এই স্কুলে প্রতিবছর ৩০-৪০ জন বালিকা এসএসসি বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। অথচ ফি বছর উপকূলীয় ঝড়ের তা-বে চাল উড়ে যাওয়া ছয় কক্ষের দেওয়াল উঠানো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাফল্য অভাবনীয় ও অনবদ্য। ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় তাদের ৫ জন ‘এ-প্লাস’, ২০ জন ‘এ’ এবং ১৩ জন ‘এ-মাইনাস’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর ২০১৬ সালের জেএসসিতে ৫ জন ‘এ প্লাস’ ও ২০ জন ‘এ’ গ্র্রেড পেয়েছে। কিন্তু সেই দরিদ্র এলাকার শিক্ষকরা একাগ্রে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিজেরা বসে বাকি পাঁচটি কক্ষে ক্লাস নিয়ে এমন দ্যুতিময় ফলাফলের বালিকাদের পরিতৃপ্তির হাসিটা দেখে অর্ধযুগ ধরে সরকারি মাসিক বেতন-ভাতার প্রতীক্ষায় রয়েছেন; স্বপ্ন এমপিওভুক্ত হবেন।
এই কথাগুলো আমার জানা ছিল না। গত দুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রবাসী ওই গ্রামের জয়দেব গাইন ও দেবব্রত ঘোষ যৌথভাবে বিদ্যালয়ের ছবি সংবলিত ‘একটি আকুল আবেদন’ ইমেইলে পাঠান। সেখানে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী আমি তাদের সঙ্গে কথা বলার আগেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারক চন্দ্র ম-লকে ফোন দেই। মাটির এ মানুষটি নানা প্রশ্নের জবাবে জানান- তার পিতা, শিবপদ ম-ল ও অপর দুজন সুকুমার ম-ল ও মাধব চন্দ্র ম-লের দানকৃত জমিতে এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়টির গোড়াপত্তন ঘটে। সেক্ষেত্রে সহযোগীদের অন্যরা হচ্ছেন ওই দুই প্রবাসী, যারা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ প্রতিনিয়ত পাঠান। আর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক পরিদর্শক প্রবাসী জয়দেব গাইন বলেন, বিদ্যালয়টির ছাদ আগেই ঢালাই করা থাকলে ফি বছর চাল উড়ে যাওয়া খরচ বাঁচিয়ে আনুষঙ্গিক সংস্কারসহ শিক্ষকদের কিছুটা হলেও অর্থসঙ্গতি করা যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্য যেন পিছু ছাড়ে না; সে জন্য আবেদনটি তুলে ধরা। অনলাইনে আপনার লেখা পড়ি বলে ইমেইলটি পাঠিয়েছি।
এই হচ্ছে পূর্বকাদাকাটির সেই বালিকা বিদ্যালয়টির সাফল্যের পাশাপাশি করুণ কাহিনী। সুনির্দিষ্ট সংস্কারের জন্য প্রায় দশ লাখ টাকা প্রয়োজন। ওই প্রবাসীরা জানান, বিদ্যালয়টি অনেক চেষ্টার পরও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বিভিন্ন জনের সহায়তায় কোনোভাবে সচল থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন প্রায় বিপর্যস্ত বলা যায়।
তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার এই একমাত্র বালিকা বিদ্যালয়টি কি সার্বিক বিবেচনায় এমপিওভুক্ত হতে পারে না? প্রত্যাশা থাকলো- নিশ্চয়ই আপনার সাগ্রহপূর্ণ বিবেচনায় এই এক ডজন অতি প্রতীক্ষিত শিক্ষকের স্বপ্নটি সার্থক হবে।
ই-মেইল: নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স