ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি কি পরিবর্তন হচ্ছে?
সৈয়দ রশিদ আলম
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে যা যা বলে ছিলেন সবাই মনে করেছিলেন এই উগ্রব্যক্তি সম্ভবত তাই করবেন। কিন্তু ক্ষমতায় বসে তিনি বুঝতে পারলেন নির্বাচনকালীন অবস্থায় তিনি যা বলেছেন তা যদি প্রয়োগ করা হয় তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র একঘরে হয়ে পড়বে। সে কারণেই তিনি একাধিক প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এক চীন নীতির ব্যাপারে তিনি দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর টেলিফোনযোগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এক চীন নীতিমালা অব্যাহতভাবে অনুসরণ করে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের বাজারকে দমন করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অনেকটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। চীন যেসব জায়গায় বিনিয়োগ করেছে সেখানে অন্যান্য দেশের নাগরিকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। যে কারণে খুব সহজে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে চীনকে মাইনাস করা সহজ হবে না।
ইরানের ব্যাপারে তিনি যে কঠোরতা অবলম্বন করতে চেয়েছেন সেটা করতে গিয়েও তিনি হোঁচট খাবেন। কেননা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে যে সকল চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তা বাতিল করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। এই বিশ্বাসটা আস্তে আস্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প উপলব্ধি করছেন। ফিলিস্তিনবাসীর বিপক্ষে গিয়ে ইসরাইলকে যা খুশি তাই করার অনুমোদন দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় এটা ইতোমধ্যে তিনি উপলব্ধি করেছেন। তার সর্বশেষ বক্তব্য হচ্ছেÑ মধ্যেপ্রাচ্যের যে সমস্যা তা মেটাতে দীর্ঘসময় লাগবে। অর্থাৎ তিনি যতদিন প্রেসিডেন্ট থাকবেন ফিলিস্তিনবাসীরা আশাবাদী হতে পারবেন না। আবার এটাও ঠিক মাঝে মাঝে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে লোক দেখানো বিবৃতি দিবেন। কারণ একাধিক মুসলিম দেশের সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক রাখতে চাইবেন। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক রাখবেন। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রেতার তালিকায় প্রথম বড় ক্রেতা হচ্ছে সৌদি আরব। এছাড়া সৌদি আরবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে তিনি কয়েকশত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে তিনি খুব একটা বেশি তিক্ততায় জড়াবেন না। আবার খুব বেশি ঘনিষ্ট হতেও চাইবেন না। ইউরোপের দেশগুলোকে তিনি হুমকির মধ্যে ফেলে দিবেন না। অর্থাৎ যেসব ইউরোপের দেশ ন্যাটোজোটের সদস্য তিনি তাদের পাশে থাকবেন। একাধিক ন্যাটো সদস্য ভুক্ত দেশগুলোকে ভবিষ্যতে সেনাবাহিনী ও সমরাস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে যাবেন। মেক্সিকোর সঙ্গে তিনি আস্তে আস্তে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চাইবেন। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে যে সকল দেশ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে তাদেরকে তিনি সহযোগিতা করে যাবেন। তবে সরাসরি চীনের সঙ্গে নৌযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চাইবেন না। পর্যবেক্ষকরা আশাবাদী, ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীতে আরও বাস্তবমুখী পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করবেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে চিরকালীন দ্বন্দ্ব রয়েছে তিনি সেক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করবেন আবার একইসঙ্গে ভারতের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করে যাবেন। অর্থাৎ কথা ও কাজের মিল না থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সম্ভবত তার উপদেষ্টাদের উপদেশ অনুসরণ করবেন। তা যদিই করেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ও বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান