বিশপ মজেস কস্তা চট্টগ্রামের প্রথম মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ নিযুক্ত
মানিক উইলভার ডি.কস্তা
২ ফেব্রুয়ারী, বিকাল ৫.০০ টায় বিশ্ব ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ‘চট্টগ্রাম ডায়োসিস’কে ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান আর্চডায়োসিস’ এ উন্নীত করেন। একই সাথে বিশপ মজেস কস্তা, সিএসসিকে নব প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান আর্চডায়োসিস’এর প্রথম মেট্রোপলিটান আর্চবিশপ হিসেবে নিয়োগ দান করেন। বাংলাদেশে মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস-এর প্রতিনিধি এবং ভাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী চট্টগ্রামের পবিত্র জপমালা রাণী ক্যাথিড্রাল চার্চে উপস্থিত থেকে ধর্মীয় উপাসনা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস-এর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। খ্রিস্টযাগ শেষে উপস্থিত ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তবৃন্দ নবনিযুক্ত মেট্রোপলিটান আর্চবিশপ মজেস কস্তা, সিএসসি ও ভাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরীকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য যে খ্রিস্টভক্তদের উপযুক্ত ও নিবিড় পালকীয় সেবাদানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ৮টি ডায়োসিস আছে, যেগুলো হলো, ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল। প্রতিটি ডায়োসিস এর অন্তর্ভূক্ত আছে বেশ কয়েকটি প্যারিশ বা চার্চ। প্রতিটি চার্চের ধর্মযাজক ‘প্যারিস প্রিস্ট’ নামে অভিহিত। আর ডায়োসিস-এর প্রধান ধর্মযাজক হলেন একজন ‘বিশপ’। ৮টি ডায়োসিস-এর মধ্যে এযাবত মাত্র ঢাকাই বাংলাদেশের একমাত্র ‘মেট্রোপলিটান আর্চডায়োসিস’ ছিল।
চট্টগ্রাম ডায়োসিস এর এলাকা বাংলাদেশের ৯টি প্রশাসনিক জেলা জুড়ে বিস্তৃত। জেলাগুলো হলো: চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম।
ভাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী চট্টগ্রামকে ডাইয়োসিসকে মেট্রোপলিটান আর্চডায়োসিস হিসেবে রূপান্তরের পোপীয় ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন।
ভাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী চট্টগ্রামকে ডায়োসিসকে মেট্রোপলিটান আর্চডায়োসিস হিসেবে রূপান্তরের পোপীয় ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন।
চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার। এই জেলাগুলোতে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্যারিশ বা চার্চ আছে ১১টি এবং সাব-প্যারিশ আছে ৫টি। চট্টগ্রাম ডায়োসিস-এর প্রধান ধর্মযাজক মাননীয় ‘বিশপ’ চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটাস্থ বিশপ ভবন-এ অবস্থান করেন।
ঐতিহাসিক এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। বাংলাদেশে চট্টগ্রামেই প্রথম খ্রিস্টানদের বসতি গড়ে ওঠে ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগীজ ব্যবসায়ীদের আগমনের মধ্য দিয়ে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে পাথরঘাটা এবং আনোয়ারা উপজেলার দিয়াং-এ গড়ে ওঠে প্রথম গির্জা। জেজুইট সম্প্রদায়ের যাজক ফাদার ফ্রান্সেসকো ফার্ণান্দেজ ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে আসেন এবং পরবর্তীতে আরাকানদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তৎকালে বাংলাদেশে কোন ডায়োসিস ছিল না। ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অবিভক্ত পূর্ব বঙ্গের ‘ভিকার এপোস্টলিক’ এর ধর্মাসন-এর মর্যাদা লাভ করে অর্থাৎ কোন ডায়োসিস না থাকায় চট্টগ্রামেই ছিল সমস্ত পূর্ব বঙ্গের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান কেন্দ্র।
পরবর্তীতে ‘ভিকার এপোস্টলিক’ এর ধর্মাসন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামকে ‘ডায়োসিস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন চট্টগ্রাম ডায়োসিস এর এলাকাধীন ছিল বর্তমান বরিশাল ডায়োসিস এবং ভারত ও মায়ানমার-এর বিস্তৃত এলাকা। চট্টগ্রাম একটি বন্দর নগরী এবং স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কেন্দ্র বিন্দু। চট্টগ্রামের রয়েছে সুদীর্ঘ সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ইতিহাস। চট্টগ্রামে বিশেষভাবে শিক্ষা সেবা এবং চিকিৎসা সেবায় ক্যাথলিক খ্রিস্টানগণ জড়িত আছেন শুরু থেকেই এবং তারা সেবা করছেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে সকলকে। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব দেশব্যাপী সর্বজনস্বীকৃত। চট্টগ্রাম ডায়োসিস একটি ‘মেট্রোপলিটান আর্চডায়োসিস’ এ রূপান্তর হওয়ায় এবং চট্টগ্রাম একজন ‘মেট্রোপলিটান আর্চবিশপ’ পাওয়ায় এই স্বীকৃতিতে যোগ হলো আরেকটি অধ্যায়।