পরিবহন ব্যয় বিপুল হারে বাড়বে
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি : কী ধরনের প্রভাব পড়বে জনজীবনে?
ফিরোজ আহমেদ
আওয়ামী লীগ চাইবে আলোচনার কেন্দ্র থাকুক হেফাজত, আলোচনার কেন্দ্রে থাকুক হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি। প্রয়োজনীয় প্রতিটি উস্কানির রসদ সে সরবরাহ করে চলে। পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকদের যতবেশি বিভাজিত করা যাবে, তত তার সুবিধা। হেফাজত আওয়ামী লীগের ছায়া মাত্র, এই দুই ভাই মিলে মানুষের রাজনীতিতে গৌণ করতে চায়। জনগণের পক্ষের প্রতিটা সংগ্রামে বিভেদের রাজনীতির এক একটা ইট খসে পড়ে, ঐক্যের ভিত মজবুত হয়। যত শক্তিশালী হবে পোশাকশ্রমিকদের দাবি আদায়ের রাজনীতি, তত গৌণ হবে আওয়ামী লীগের লুটেরা স্বার্থ, হেফাজতের সাম্প্রদায়িক স্বার্থ।
যত শক্তিশালী হবে জাতীয় সম্পদ লুটপাটের বিরুদ্ধে রাজনীতি, যত শক্তিশালী হবে লুটেরাদের বিরুদ্ধে জনগণের স্বার্থের রাজনীতি। যত শক্তিশালী হবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ, ততবেশি গণশত্রুদের রাজনীতি গৌণ হবে। জনগণের স্বার্থের প্রশ্নগুলো যতবেশি সামনে আসবে, ছায়াশত্রুরা ততবার মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়, কেননা দাবি আদায়ের রাজনীতি জনগণকে তাদের কব্জা থেকে বের করে নিয়ে আসে সত্যিকারের রাজনীতির মাঠে। সেই মাঠে হয়তো দেখা যাবে, লীগ-হেফাজত একই পক্ষের হয়ে জনগণের বিরুদ্ধে নামছে। এ তো গেল বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় গণস্বার্থের হরতালের রাজনৈতিক দিকটি। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গ্যাসের মতো কৌশলগত এই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের ভঙ্গুর উৎপাদনী খাত, সংযোজন শিল্প আর কৃষিকে আরও বিপদগ্রস্ত করবে। পরিবহন ব্যয় বিপুল হারে বাড়বে।
লাভের হার বাড়বে আওয়ামী লীগের, কেননা সরকারের আড়ালে তারাই জনগণের করের অর্থ চুরি করছে। পাঁচ বছরেই সরকার প্রায় চার হাজার কোটি টাকা গ্যাস খাত থেকেই মুনাফা করেছে সব খরচ বাদ দিয়ে। এই করের টাকা চুরি হয় বেসিক ব্যাংকে, এই টাকা চুরি হয় হলমার্কের নামে, এই টাকা চুরি হয় উন্নয়নের নামে শতগুন বাড়তি টাকা লোপাট করে। আর লাভ হবে এলএনজি ব্যবসায়ীদের, তারাও আওয়ামী লীগেরই আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু বাংলাদেশ পরিণত হবে ভারত-চীন আর এই সব দেশের বাজারে। বেকারত্ব বাড়বে। দরিদ্র মানুষের ওপর দুর্দশার বোঝা বাড়বে। মধ্যবিত্তও চাপের মুখে পড়বে।
পরিচয়ের রাজনীতি যতক্ষণ কেন্দ্রে থাকে, মানুষকে টেনে নিয়ে যায় ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে। জীবনের দাবি যখন সামনে আসে, কে ভাই-বোন, আত্মার আত্মীয়, কে শত্রু, সেই উপলব্ধি হয়। শাসকগোষ্ঠী চাইছে বাংলাদেশকে পরিচয়ের রাজনীতিতে আটকে রাখতে। আপনি কি নেমে আসবেন না বাংলাদেশে জনদাবির রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে? ভ-ামির রাজনীতির দিন শেষ, এবার জবাব দেওয়া শুরু করুক বাংলাদেশ। ২৮ তারিখ মঙ্গলবার, ঢাকা শহরে ৬-১২টা হরতাল। সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ। এই হরতাল সফল করুন, রাজনীতির দিশা হাজির করুন।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন
সম্পাদনা: আশিক রহমান