সৈয়দ আবুল হোসেন কেন স্মরণীয় হবেন?
রবিউল আলম
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর জন্য সৈয়দ আবুল হোসেনের ত্যাগ জাতি একদিন স্মরণ করবে, প্রমাণিত হবে আমরা দুর্নীতিবাজ নই। ত্যাগ কখনো বিফলে যেতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দৃঢ়চেতা মানুষ। তার আবিষ্কৃত নেতা নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি। তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, এই সময়ে অনেক নেতাকেও তিনি তৈরি করেছেন। নেতৃত্ব নিয়ে গর্ব করতে পারে আওয়ামী লীগ। তেমনই একজন নেতা সৈয়দ আবুল হোসেন। আমার ওয়ার্ডে কালকিনির অনেক লোকজন থাকেন, ছেলে-মেয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন ঢাকায়। মেট্রিক পরীক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, কালকিনিতে চলে যান। আমার কাছে অবাক লাগছে, যেখানে গ্রামের থেকে মানুষ উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় আসে, সেখানে উল্টোপথে ঢাকা থেকে গ্রামে যান উচ্চশিক্ষার আশায়। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু সৈয়দ আবুল হোসেনের জন্য। সমাজসেবার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনার আবিষ্কার। শেখ হাসিনার আবিষ্কার মেয়র সাঈদ খোকন, আনিসুল হক, একেএম রহমত উল্লাহ, আলহাজ মো. সাদেক খান, জুনায়েদ আহমেদ পলক, নাজমুল হাসান পাপন, গোলাপ, শেখর, কৃষিবিদ নাসিমসহ অনেকেই আছেন যাদের নিয়ে শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। যেভাবে চ্যালেঞ্জ করতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সাজেদা চৌধুরী, তাজউদ্দীন আহমদ, মুনসুর আলী, মেয়র হানিফদের নিয়ে।
আমার সংসারের কোন মানুষটার চরিত্র কেমন তা যদি আমি বলতে না পারি তাহলে সংসারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করব কি করে? কথায় আছে, ব্যক্তিত্ব ছাড়া নেতৃত্ব হয় না, অর্থ আর সম্মান একসঙ্গে অর্জন করা যায় না। দলে কোনো মন্দ মানুষ নেইÑ এ কথা আমি বলব না, তবে তাদের সংখ্যা কত? অনেকে মন্ত্রী হয়ে টাকা কামিয়ে জাতির কাছে অপমান ও অপদস্ত হয়েছেন, মন্ত্রিত্বও হারিয়েছেন। আবার অনেক মন্ত্রী জাতির কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অনেকে মন্ত্রী হয়েও নাম ধরে রাখতে পারেননি। ক্ষণিকে আসা ও ক্ষণিকে যাওয়া ছিল তাদের রাজনীতি, রাজ্জাক, তোফায়েল, মেয়র হানিফ হতে পারেননি। তাদের রাজনৈতিক ত্যাগ জাতি কখনো ভুলতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেন, সাঈদ খোকন, আলহাজ সাদেক খানরা রাজনীতিতে যে উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছেন তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের নিয়ে গর্ব করতেই পারেন। রাজনীতি কি ভোগের বিষয়? রাজনীতি হলো ত্যাগের, যারা ত্যাগ করতে জানেন না তাদের রাজনীতিতে থাকার দরকার আছে?
এখন কিছু ব্যাঙের ছাতার মতো পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, ব্যানার দেখা যায় অমুক লীগ, তমুক লীগ। ইয়াবার ব্যবসা করেন কিন্তু দলের নামে নিজের ছবি ও পোস্টার লাগিয়ে পরিচিতি নেন, আর ধরা পড়লে মর্যাদাহানি হয় আওয়ামী লীগের। আমরা তো গর্বিত জাতি, আমাদের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, বাঙালি পারে না এমন কি আছে পৃথিবীতে? আপনি ভালো কাজ করবেন, বিতর্কিত হবেন, জীবন দিবেন, ইতিহাস গড়বেন, দেশ ও জনগণ নিরাপদে থাকবে এবং আপনি হবেন স্মরণীয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাদের চরিত্র নিয়ে অনেকেই বিতর্ক করতে চেয়েছে, জাতি কি তা গ্রহণ করেছে? সত্য কখনো চাপা থাকে না, তাকে ঢেকে রাখা যায় না। এ সত্য শেখ হাসিনা জানতেন, তাই গর্ব করে বলেছিলেন সত্য একদিন বেরিয়ে আসবেই। এসেছে এবং প্রমাণও হয়েছেÑ আমরা নিরাপরাধ। আজ বাঙালি, বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ অপবাদ থেকে মুক্ত হয়েছে কানাডার আদালতে। কিন্তু সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ঘৃণিত হয়েছে খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূস। তারাও নিজেদের বাঙালি হিসেবে দাবি করেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করেন। একজন সামাজিক ব্যবসার দালাল এবং আরেকজন রাজনীতির নামে বিদেশিদের দালাল, যারা পদ্মা সেতু ভাঙিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিল। দেশের উন্নয়ন ও জনগণকে ঠকিয়ে যদি রাজনীতি ও সামাজিক ব্যবসা করতে হয়, তবে তাদের কি বলা যায়, শেখ হাসিনারাও জিজ্ঞাসা তাদেরকে কি করা যায়?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জনগণ এখন অনেক সচেতন, জবাব রাজনৈতিকভাবে দিতে হবে। তাদের অবস্থান কোথায় আছে, আর কোথায় রাখতে হবে, জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে। দেশের টাকা চুরি করে আমেরিকায় গিয়ে নির্বাচন করে, মানুষ কি তা বুঝতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে। একটু অপেক্ষা করুন।
পদ্মা সেতু যদি দেশিয় টাকায় না করতে পারতাম, তবে আমরা হতাম রাজাকার, ওদের ষোলকলা পূর্ণ হতো। রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসার স্বপ্ন দেখা ড. ইউনূস কি পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করতেন, জনগণকে জানাতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হতেই হবে। ইতিহাসÑ শেখের বেটি শেখ হাসিনা, ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল সৈয়দ আবুল হোসেন, মসিউর রহমানসহ যারা অপমান-অপদস্থ হয়েছেন, তারা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। যারা পদ্মা সেতু তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন তাদের স্থান হবে মীর জাফরদের তালিকায। যারা অপরাজনীতি করেন তাদের শিক্ষা নিতে বলছি পদ্মা সেতু থেকে। ত্যাগ ছাড়া বীর হওয়া যায় না। সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো ইতিহাস হতে পারবেন না, শেখের বেটি হাসিনার মতো বাংলার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে অনেক ত্যাগের প্রয়োজন হয়।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান