ইশতেহার তৈরি কাজ শেষ পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে বিএনপির
শাহানুজ্জামান টিটু: নির্ধারিত সময়ের আগেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো সকল প্রস্তুতি বিএনপির রয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগে যদি সরকার কোনো কারণে জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা করে সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দলটি সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে। দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, বিএনপির নির্বাচনি প্রস্তুতি ইতোমধ্যে প্রায় শেষ। অতীত ইতিহাস দেখলে আপনারা দেখতে পাবেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ এরশাদের অধীনে নির্বাচন করেছে। বিএনপি কিন্তু ওই সময় নির্বাচনে যায়নি। সবাই ভেবেছে বিএনপির বোধ হয় ভোট নেই বা নির্বাচনি কাজকর্ম গোছানো নেই। এজন্য হয়তো তারা ৮৬-এর নির্বাচনে যায়নি। কিন্তু ৮৮-তে দুই দল এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গেল না। ৯০-তে অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে। বিএনপি সর্মথক ও সহানুভূতি সম্পন্ন রাজনৈতিক দল। সুতরাং এদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ভোটের বাক্সে গিয়ে। সেটা মাথায় রেখে বিএনপি অগ্রসর হচ্ছে এবং একইসঙ্গে সাংগঠনিক কর্মকা- আরও সুসংহত ও আরও সাজিয়ে গোছানোর সেই তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
দলটির নীতিনির্ধারক জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে যেকোনো সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি বিএনপির সবসময়ই আছে। শুধু তাই না বিএনপি এককভাবে তিনশত আসনে প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতাও রয়েছে। কিন্তু দেখতে হবে নির্বাচনটা কোন সরকারের অধীনে হচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা বলছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রধানকে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই সবকিছু পর্যালোচনা চলছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দলের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপির প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই আছে এবং প্রস্তুতিটা আরও বেগবান করার জন্য প্রক্রিয়াও চলমান। জেনে খুশি হবেন, বিএনপির নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির চূড়ান্ত কাজও অনেকটা এগিয়ে গেছে। যেকোনো সময় তারা নির্বাচন দিক, আলোচনা করে নিরপেক্ষ আদলে সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। ফলে কখন নির্বাচন হবে সেটা যেমন বিষয় ঠিক এর বিপরীতে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর যাতে বড় ধরনের কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে না হয় কিংবা তাড়াহুড়ো করে যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া লাগে, এজন্য আগেভাগেই ইশতেহার তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির সংস্কারপন্থিদের নিয়ে এর আগে বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বাজারে ছিল। আর আওয়ামী লীগের অবস্থা হলো তারা পরপর দুইবার ক্ষমতায় আছে। আর বিএনপি পরপর দুই টার্ম ক্ষমতার বাইরে। সুতরাং আমাদের আরও বেশকিছু জিনিস পর্যবেক্ষণের বিষয় ছিল কিংবা এখনো আছে। তবে পর্যবেক্ষণটা এখন শেষ হয়ে গেছে এমনটা মনে করি না। পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে যেখানে যেখানে ভালো যাদের পাওয়া যাচ্ছে বা পাস মার্ক পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোকে বোধ নিয়ে আশা হচ্ছে।
দলটির এক নীতিনির্ধারক জানান, বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে ঘোষিত ভিশন টোয়েন্টি থার্টি রূপরেখা থেকে অনেক উপাদান নির্বাচনি ইশতেহারে সংযুক্ত হবে এবং এর সঙ্গে আরও নতুন নতুন বিষয় আসবে। দেশি-বিদেশি, আঞ্চলিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে, আইটি সেক্টরে উন্নয়ন, অর্থনীতি, রাজনীতি, পরাষ্ট্রনীতি, গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গরূপ দেওয়াসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে স্থায়ী আইন করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
এদিকে ইশতেহার নিয়ে কাজ করছেন এমন এক নেতা জানান, যেসব বিষয়কে নির্বাচনি ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, খনিজ সম্পদ, পানি সম্পদ, আইন ও বিচার, স্থানীয় সরকার, প্রতিরক্ষা, নারী উন্নয়ন, শিশু কল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও সংষ্কৃতি, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান, শ্রমকল্যাণ, সমবায়, মানবাধিকার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও সন্ত্রাস দমনের বিষয়গুলো। জনগণের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভিজ্ঞ দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞগণের মতামত ও পরামর্শ নেওয়ার বিষয়টিও নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ থাকতে পারে। সম্পাদনা: এনামুল হক