প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে রাখতে হবে, নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস
অজয় দাশগুপ্ত
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূলত একটি বর্ধিত জীবনযাপন করছেন। স্বাভাবিক মৃত্যুর আগেই তাকে মেরে ফেলার কত চক্রান্ত আর কত ষড়যন্ত্র। খোদ ঢাকার বুকে গ্রেনেডের মতো অস্ত্র দিয়ে মারার অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। যেদিন তাকে চট্টগ্রামে মারার ষড়যন্ত্র সফল করতে খুনিরা রাস্তায় নেমে এলো সেদিন আমি ছিলাম নিকটবর্তী এক জায়গায়। মুহূর্তের ভিতর বদলে যেতে পারত দৃশ্যপট। বদলে অবশ্য গিয়েছিল। তবে অন্যভাবে। আওয়ামী লীগ ও মানুষের প্রতিবাদে ঘৃণায় ফুঁসে উঠেছিল চট্টগ্রাম।
কে না জানে তার দুশমনের অন্ত নেই। নানা কারণে বিশেষত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধীরা এখন পিতার চাইতেও কন্যাকে অধিক ভয় পায়। তিনি পঁচাত্তরের খুনি, একাত্তরের অপরাধী সবাইকে শাস্তি দিয়েছেন। এতবড় কাজের ফসল যেমন উঠবে তেমনি এর অন্যদিকে থাকা ভয়ংকর খুনি ও পাপীরাও ছেড়ে কথা বলবে না। তাই দেশ শাসনে থাকার পরও তার নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন আর মাঝে মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা সত্যি মর্মাহত।
সান্তাহারের জনসভায় ভাষণ দিয়ে নিচে নেমে আসা প্রধানমন্ত্রীর পায়ে পড়ার মতো জায়গায় চলে গিয়েছিল এক মহিলা। এতসব নিñিদ্র নিরাপত্তার বেষ্টনী ভেদ করে কি করে সে পর্যন্ত পৌঁছাল? কি করে সম্ভব হলো তার এই ঢুকে পড়া? আমরা কি শ্রীলঙ্কার নিহত নেতা প্রেমাদাসার কথা, ভুলতে পারি ভারতের ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী পরে বিরোধী নেতা হিসেবে বোমার আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যাওয়া সুদর্শন রাজীব গান্ধীর কথা? এই ভদ্রলোক বংশ পরম্পরায় এমন এক অতীত। যার দাদা নেহেরু, যার মা স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধী। যিনি না হলে বংলাদেশ হতো না। সেই লৌহমানবীর বড়পুত্র রাজীব উপমহাদেশের প্রথম শরীর বোমায় উড়ে যাওয়া নেতা। সে ছবিগুলো আজও মনে দাগ কেটে আছে। খুব বেশিদিনের কথা না। সে ঘটনা কি ভুলে গেছি আমরা?
কি করে এই মহিলা শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারল? জনসভায় প্রত্যেক মানুষের তল্লাশী সম্ভব নয় বলেই তো এখন মঞ্চ করা হয়ে থাকে অনেক দূরে। বিশ্বস্ত এবং যন্ত্র দিয়ে শরীর অনুসন্ধান না চালানো পর্যন্ত সেখানে মাছিও ঢুকতে পারার কথা না। আমরা মিশরের আনোয়ার সাদাতকে কুচকাওয়াজ নিতে গিয়ে মরতে দেখেছি। শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট থাকত বলে সামনে থেকে তার মুখম-ল ঝাঁজরা করে দেওয়া হয়েছিল। রাজীব গান্ধী যখন শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন সেখানেও তাকে বন্দুকের বাট দিয়ে আক্রমণ করেছিল এক সেনা সদস্য। সেদিন বন্দুকে গুলি থাকলে তার মায়ের মতো সেখানেই উড়ে যেতেন তিনি। ইন্দিরাজীর মর্মান্তিক হত্যার সেই জায়গাটা সাসা স্ফটিক কাচে বাঁধানো। মাঝে একটা লাল গোলাপ। যখন দেখেছিলাম মনে হচ্ছিল দুনিয়ায় আসলে কেউ-ই কোথাও নিরাপদ না। পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টোকে রাজপথে গুলি করে মারা হয়েছিল। এত ঘটনার পরও আমাদের সিকিউরিটি এতটা হালকা হয় কি করে? প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমরা আওয়ামী লীগের নানা দোষ এড়িয়ে যাই। তার নেতৃত্বের সাহস ও প্রজ্ঞা আরও অনেকদিন প্রয়োজন আমাদের। তিনি মুখে যাই বলুন, যত অপ্রিয়ভাষী হোন তার ভিতরেই আছে আসল বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ। যারা সেটা জানে তারা তাকে প্রতিনিয়ত খুঁজে বেড়াচ্ছে। নিরাপত্তার এই অভাব তাই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী আপনি নিরাপদ থাকুন। আপনার নিরাপত্তার ওপর এখন দেশ ও জাতির অনেক কিছু নির্ভরশীল। আমরা এই দেশকে পুনর্বার হায়েনার হাতে দেখতে চাই না। যারা এবার মাটিশুদ্ধ উপড়ে নেবে, কলিজা খুঁড়ে খাবে আর হত্যা-ধর্ষণের মতো ব্যাপারগুলো স্বাভাবিক করে তুলবে তাদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদ রাখতেই হবে। এটা দেশের জন্যও হিতকর হতে বাধ্য। কঠিন হতেই হবে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি, নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস/শান্তির ললিত বাণী শুনাইবে ব্যর্থ পরিহাস।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান