বাল্যবিয়ের আইনি স্বীকৃতি, কোথায় যাচ্ছি আমরা?
উম্মুল ওয়ারা সুইটি
ইভটিজিং, ধর্ষণ এখন নিত্যকার ঘটনা। ৪ বছরের কন্যাশিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এসব ঘটনার কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেই। নিরপরাধ এসব মেয়েরা সামাজিকভাবে মাথা নিচু করে বড় হচ্ছে। যেন নিপীড়নের শিকার হওয়া তারই অপরাধ। কন্যা হিসেবে জন্মেই যেন সে মহা অন্যায় করেছে। ধর্ষকের সঙ্গে অহরহ বিয়ের প্রস্তাব আসছে। দুর্বল পরিবারগুলো জেনেশুনে বিষপান করছে। চাপে পড়ে লম্পট, বখাটে সেই ধর্ষকের কাছে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনায় এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তি হয়নি। উপরন্তু ধর্ষক তার কাক্সিক্ষত সেই কন্যাকে বউ হিসেবে পেয়েছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে। আর কন্যা সেই মৃত্যুসম স্মৃতি নিয়ে ঘর করছে।
এই নির্মম নিপীড়ন এখন সংসদ স্বীকৃতি দিল। যখন নিপীড়ক আর ধর্ষকদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে রাজপথ প্রস্তুত। তখন ধর্ষকদের জন্য জামাই আদর মার্কা একটা আইন পাস হলো। এই আইনে নারীর ক্ষমতায়নকে আঘাত করা হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সে মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আইনে বাল্যবিবাহের বিষয়ে বিশেষ যে বিধান রাখা হয়েছে, সেটি পুরোপুরিভাবে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজকেই আরও নেতিবাচকভাবে কার্যকর করার প্রয়াস ঘটিয়েছে। এই আইন পাস হওয়ার আগে বাল্যবিয়ের বিষয়টি সমাজের গোপন এবং অতি গোপন বিষয় ছিল। কিশোরীদের কথা বলার একটি জায়গা থাকলেও এখন আর সেই চ্যালেঞ্জ থাকল না। ফলে মাতৃমৃত্যু, বাল্যবিয়ে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী শিক্ষার উপর আঘাত আসবে।
এই আইন আমাদের চিন্তার ক্ষেত্রকে নাজুক করে দিয়েছে। আমরা যে এখনো মেয়েদের উচ্চশিক্ষা বিয়ের জন্য সমস্যা হতে পারে। গ্রামের সেই প্রচলন আইনি স্বীকৃতি পেল। তা হলো, বাবা-মায়েরা এখনো বেশি বয়সী মেয়েকে যৌতুক দিতে হয় এমন ভাবনা থেকে বের হতে পারেননি। বিশেষ পরিস্থিতির কথা শুনিয়ে এখন সমাজে একের পর এক বাল্যবিয়ে হতেই থাকবে। এই বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে উৎসাহিত হবে। আমাদের সবারই এখন আশংকা নতুন এই আইন ধর্ষণকে বৈধতা দেবে। আমাদের আইনে ১৮ বছর বয়সে বিয়ের বিষয়টা একটা মাইলফলকে রূপ নিয়েছিল। এ সময়ে এসে এ ধরনের সিদ্ধান্ত ভীষণ বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। আমরা এই আইন নিয়ে কিভাবে শিশু বিয়ে বন্ধ করব?
লেখক: প্রধান প্রতিবেদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান