চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় দুই মাসের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
মিজান লিটন, চাঁদপুর : ‘জাটকা রক্ষা করবো মেঘনার চর গড়বো’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে মার্চ এবং এপ্রিল এই দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা- মেঘনা নদীতে অভয়াশ্রম আজ থেকে শুরু হয়েছে। এ অভয়াশ্রম চলাকালে চাঁদপুরসহ দেশের ৫টি জেলার নদীতে মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো-চাঁদপুর, ভোলা, লক্ষীপুর,পটুয়াখালী ও শরীয়তপুর।মৎস্য আইনে এ সময়ের মধ্যে মেঘনা পদ্মার বিস্তৃর্ণ এলাকায় কোনো প্রকার জাল ব্যবহার ও কোনো প্রজাতির মাছ শিকার করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অভয় আশ্রমের দুই মাস মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরবিহন, মজুদ ও নিষিদ্ধ। কেউ আইন অমান্য করে জটকা নিধন করলে তিন বছরের কারাদ- ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের অস্তিত্ব যখন বিলীন হওয়ার পথে, ঠিক সেই সময় ২০০৬ সালে ইলিশ বিজ্ঞানীদের সুপারিশে সরকার চাঁদপুরের ৬০ কিলোমিটার নদীকে জাটকা মাছের অভয় আশ্রম ঘোষণা করে জাল দিয়ে সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে। ওই বছর সাফল্য আসায় পরবর্তীতে দেশের আরো চারটি অঞ্চলকে জাটকার অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও জাটকা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরসহ সারা দেশের পাঁচটি অভয় আশ্রমের সাড়ে সাত হাজার বর্গকিলোমিটার নদীতে দুই মাস নিষিদ্ধ থাকবে মাছ ধরা। চাঁদপুর জেলায় ইলিশ শিকারে নিয়োজিত লক্ষাধিক জেলে পরিবার রয়েছে। সরকারি হিসেবে তালিকাভুক্ত এ সংখ্যা ৩৬ হাজার ৫শ’ ৫ জন। এর মধ্যে ৩০ হাজার জেলে পরিবারকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। তালিকার বাইরে থাকা সাড়ে ছয় হাজার জেলে পরিবারের খাদ্য সহায়তা পাওয়া এখনও অনিশ্চিত। যে কারণে পেটের দায়ে এসব জেলে পরিবারগুলোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা শিকার করার আশঙ্কা রয়ে গেছে। গবেষকরা বলছেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে যে কোনো মূল্যে জাটকা রক্ষা কার্যক্রম সফল করতে হবে। বন্ধ করতে হবে জাটকা নিধন।
মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটর গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, সঠিকভাবে জাটকা রক্ষা করা সম্ভব হলে আগামি মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে এ বছর জাটকা রক্ষা কার্যক্রম কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। কোনো জেলে যাতে নদীতে মাছ ধরতে না পারে সে জন্য সচেতনতার পাশাপাশি নদীতে টাক্সফোর্স গঠন করা হয়েছে। জেলাপ্রশাসন, কোস্টগার্ড, পুলিশ বাহিনী, নৌ-পুলিশ থাকবে এ টাক্সফোর্সের আওতায়। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল জানান, যেসব জেলার নদীতে জাটকা ইলিশের বিচরণক্ষেত্র রয়েছে সেসব এলাকায় জাটকা রক্ষা কার্যক্রম তদারকির করবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা । সম্পাদনা: মুরাদ হাসান