দলে গডফাদার চাই না ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন : কাদের
আল হেলাল শুভ: শহীদ দিবসের আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের মূহুর্মুহু সেøাগান ও করতালির মধ্যে ছাত্রলীগকে প্রশিক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, রাজনীতিতে গডফাদারদের যুগ শেষ। আওয়ামী লীগে আমরা জনধিকৃত গডফাদার চাই না। গতকাল রাজধানীতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনসস্টিটিউটে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ।
সভায় ছাত্রলীগের কাতালি ও বিক্ষিপ্ত সেøাগানে বিরক্তি প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। নিজের বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, কোনো সাইট টক করবে না। তোমরা অবিরাম মোবাইলে কথা বলছ, তাহলে কি এই সভায় তোমরা উৎসব করতে এসেছ। পছন্দ না হলে আলোচনা সভায় আসার দরকার নেই। এ সময় তিনি বলেন, সারাদেশে ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি দরকার। ছাত্রলীগ যদি সারাদেশে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেয় ও পড়াশোনায় মনোযোগী হয়। তাহলে ছাত্রলীগের নামে যে সকল অপকর্ম হয়, তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আকর্ষণীয় করতে হলেও তাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিলে সংগঠনের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। কারণ বেসিক কিছু বিষয় নিয়ে বারবার বলার পরও তোমরা সংশোধন হচ্ছো না। মঞ্চে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশে এ সময় তিনি বলেন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনো, এখানে (নেতৃত্বে) শৃঙ্খলা না এলে, ওখানেও (কর্মী) আসবে না।
এর আগে সভার শুরু থেকেই করতালি ও বিক্ষিপ্ত সেøাগানে মধ্যেই আলোচনা শুরু করেন আলোচকরা। এ সময় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি বায়েজিদ আহম্মেদ বারবার সেøাগান বন্ধ করতে বললেও অবিরত চলতে থাকে নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও নেতাকর্মীদের সেøাগান বন্ধ করতে বললেও তারা তা বন্ধ করেনি।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেশি পড়াশোনার তাগিদ দিয়ে সংগঠনের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, রাজনীতি করতে হলে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনা না করে নেতার পিছনে ঘুরঘুর করলে, তখন নেতা যায়ই বলবে তুমি তাই করবে। নেতা খারাপ কাজ করতে বলে তুমি তাই করবে। কিন্তু যখন তুমি পড়াশোনা করে নিজেকে সমৃদ্ধ করবে তখন নেতার খারাপ কাজের নির্দেশনাও তুমি মানবে না।
সভায় দেশব্যাপী ডাকা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের। এই ধর্মঘটকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে তিনি বলেছেন, আদালতের রায়ে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলানোর অধিকার পরিবহন শ্রমিকদের নেই। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আদালতের রায়ের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই এ রায়ে জনগণ কেন ভোগান্তিতে পড়বে? কাজেই আপনাদের (আন্দোলনকারী) এ অযৌক্তিক ধর্মঘট জনস্বার্থে দ্রুত প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত।
রাজনীতির গডফাদারদের পরিণতি করুণ। তাদের পরিণতি অস্বাভাবিক হয়। আমাদের দলে জনধিকৃত গডফাদার চাই না। দলে জনপ্রিয়, যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদের চাই। গডফাদারদের বিরুদ্ধে আমরা আপসহীন লড়াই শুরু করছি। কেউ যদি নিজেকে গডফাদারের রূপে তৈরি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমাদের দলের অবস্থান কঠোর। ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশ্য করে এ সময় তিনি বলেন, কেউ গডফাদারের ভাবমূর্তি গড়ে তোলে না। তাহলে ভাব ও মূর্তি কোনোটাই থাকবে না। এ জন্য গডফাদার সুলভ রাজনীতি এখন থেক পরিহার করতে হবে।
সভায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্র সংসদের নির্বাচন হলে শিক্ষার্থী কলহ-কোন্দলে জড়াবে না। তারা খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকবে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমি পুনরায় আহ্বান করছি। ছাত্র রাজনীতিকে আকর্ষণীয় করতে হলেও ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রয়োজন বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি বায়েজিদ আহমেদের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মিরাজ হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক মামুনুর রশীদ শুভ্র, সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার কবির প্রমুখ। সম্পাদনা: এনামুল হক