ব্যাংকের ঋণ প্রতিমাসে লোপাট ৪৪০ কোটি টাকা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারের আয় ৩৪১কোটি
জাফর আহমদ: ব্যাংক থেকে ঋণ দিয়ে পুরোটাই আত্মসাৎ করে নিচ্ছে একটি মহল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে প্রতিমাসে ৪৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়। যার ৮০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের। প্রথমে ভুয়া বন্ধক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই ঋণগুলো দেয়া হয়।পরে অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে টাকা লোপাট করা হয়। অর্থনীতিবিদ, ড. জাহিদ হোসেন এই ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতিকে বলেছেন, ক্ষতির উপর ক্ষতির পরিস্থিতি। উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলো দিয়ে দিচ্ছে কিছু লোককে। এই ক্ষতির টাকা আবার পরোক্ষভাবে নেয়া হচ্ছে সাধারণ সঞ্চয়কারীদের কাছ থেকে। দেশের পুরো আর্থিক ব্যবস্থাপনাই ভেংগে পড়েছে।
উল্লেখ্য, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার প্রতিমাসে বাড়তি যে টাকা আয় করবে তার পরিমাণ ৩৪১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গ্যাসের বর্তমান দামের সাথে প্রায় ৩৪ শতাংশ নতুন মূল্য যোগ হচ্ছে। গ্যাসের গড় দাম রয়েছে ৬ টাকা ১০ পয়সা। নতুন দাম কার্যকর হলে গ্যাসের নতুন দাম পড়বে প্রায় ৮ টাকা ৩৯ পয়সা। ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম বাড়বে প্রায় ২ টাকা ২৯ পয়সা। তবে ক্ষেত্র ভেদে এই বৃদ্ধির পরিমানও রয়েছে কম-বেশি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার ফলে বছরে সরকার বাড়তি প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। গ্যাসের উপাদন, সরবারহ ও সঞ্চালন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বাড়তি আয় মেটানো হবে। মূলত ৫৫ শতাংশ হারে সম্পুরক কর ও মূসক ধাহ্য করার ফলেই সরকারের খরচ বেড়েছে বলে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের। এই বাড়তি খরচ মেটানোর জন্য নতুন করে দাম চাপাতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে এ খেলাপি ঋণের পরিমান ছিল ৫০ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সর্বশেষ ৩ বছর ৬ মাসে খেলাপি ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এ হিসেবে প্রতি মাসে এ খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে প্রতিমাসে অবলোপন হচ্ছে ১৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সব মিলে প্রতি মাসে ঋণের নামে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ৪৪০ কোটি ২৭ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমান প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালের জুন মাসে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমান ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকার কিছু উপরে। ৪ বছরে সময়ে অবলোপনবৃত ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতের মোট মন্দ ঋণের পরিমান এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে। এ সব মন্দ ঋণ প্রতিবছর বাড়ছে। যা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের কাছে খেকে বিভিন্ন হারে সুদ দিয়ে সংগ্রহ করেছে। এ সব অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনাও কম। কিন্তু এই টাকার বিপরীতে ব্যাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়েছে। যা একদিকে খেলাপি ও অবলোপনকৃত টাকার সুদ গুনছে অন্যদিকে এই টাকার সুদ তুলে নিতে হচ্ছে ভাল গ্রাহকদের ওপর বাড়তি সুদ চাপিয়ে তুলে নিচ্ছে বাণিজ্য ব্যাংকগুলো। অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ঋণের এই নেতিবাচক ধারা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখোপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, আগের প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কমেছে। আরও যাতে কমে ব্যাংকগুলোর সাথে বৈঠক করা হচ্ছে। এনপিএল হ্রাস পওায়া মানে ব্যাংকের ক্ষতি এবং পুরো অর্থনীতির জন্য ক্ষতি-এটা বোঝানো হচ্ছে।
একদিকে খেলাপি ঋণের পরিমান বৃদ্ধি, অপরদিকে গ্যাসের মত অতিবও জরুরি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ আহমেদ।
তিনি বলেন, এরফলে বিদেশে দেশি পণ্য প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে। দেশে সাধারণ মানুষের উপরে চাপ বাড়বে, কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাবে। সর্বপরি ভোক্তার ওপর চাপ পড়বে। এ জন্য খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর গতে হবে। যাতে পুরাতন খেলাপি ঋণ কমে আসে। এবং নতুন আর যাতে খেলাপি না হয়। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত