গাবতলীতে পুলিশ-পরিবহন শ্রমিক সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অর্ধশত টানা ৩৩ ঘণ্টা ভোগান্তির পর ধর্মঘট প্রত্যাহার
ইসমাঈল হুসাইন ইমু, মাসুদ আলম: টানা ৩৩ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের পর গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে যান চলাচল শুরু হয়েছে। বেলা আড়াইটায় পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় চালক মীর হোসেনের মৃত্যুদ-ের রায়ের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা দেশব্যাপী ধর্মঘটে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। দেশজুড়ে একপ্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। সোমবার রাত থেকেই গাবতলী এলাকায় দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পরিবহন শ্রমিকেরা। গতকাল সকালে সংঘবদ্ধভাবে তারা সড়কে চলমান অন্য গাড়ি অবরোধ করে ভাংচুরের চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গরম পানি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। পাশাপাশি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে বৈশাখী পরিবহনের শাহআলম নামের এক শ্রমিক গুরুতর আহত হলে তাকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতাল পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। শ্রমিকরা জানান, পুলিশের গুলিতে শাহআলম মারা গেছেন। তবে পুলিশ দাবি করেছে নিজেদের ছোঁড়া গুলিতে শাহআলম মারা গেছেন। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, শাহআলমের শরীরে গুলির স্পিন্টার পাওয়া গেছে।
গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর প্রধান তিন পরিবহন টার্মিনাল সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছাড়েনি। রাজধানীর ভেতরে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস ছাড়া অন্য কোনো বাস চলাচল করেনি। তবে প্রাইভেটকার, অটোরিকশা ও রিকশার দখলে ছিল রাজধানীর রাজপথ। সকল সড়কে রিকশা চলাচল না করলেও বেশিরভাগ সড়কেই ছিল রিকশার মিছিল। বাস না চলাচল করায় অফিসগামী শতশত লোক পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। অনেকে ভ্যান, গাড়ি, রিকশা আর পিকআপ ভ্যান ও ছোট ট্রাকে করে রওনা হন যার যার গন্তব্যে । চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
বিআরটিসি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নৌমন্ত্রী ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান জানান, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দুটি মামলায় একজন বাসচালকের যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর পরিবহন শ্রমিকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন এবং এ কারণে কর্মবিরতি শুরু করেন। তবে এটা ধর্মঘট ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনে নৌমন্ত্রী জানান, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে তারা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা এসব দাবির বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবেলার আশ্বাস দিয়েছেন এবং এ কারণে তিনি কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। নৌমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা কোনো ধর্মঘট ডাকেনি। ধর্মঘট ডাকতে হলে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়, কিন্তু তারা সেটা দেননি। মন্ত্রীর দাবি, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জনগণের ভোগান্তি এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টায় ছিল।
অপরদিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর বিকেল ৩টার দিকে দূরপাল্লার পরিবহনগুলোর বন্ধ কাউন্টার খোলা শুরু হয়। সাড়ে ৩টার মধ্যেই সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে একাধিক গাড়ি ছেড়ে যায়। একই সময় গাবতলী ও মহাখালী এলাকা থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়। প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় মির হোসেন নামের এক বাসচালকের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছিল। অন্যদিকে সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে আদালত ২৭ ফেব্রুয়ারি চালকের ফাঁসির দ- দিলে ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী পালন শুরু করে শ্রমিকেরা। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু