পরিবহন ধর্মঘটে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেন শাজাহান খান
জাফর আহমদ: দেশব্যাপী আহুত দুর্ভোগের পরিবহন ধর্মঘটে দুই মন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান। তিনি বলেন, আমি শ্রমিক নেতা। সবসময়ই আমার বাসাতে শ্রমিক আসে। তাই বলে আমরা এই হরতালের সঙ্গে যুক্ত নই। ২৭ ফেব্রুয়ারি আমার বাসায় খুলনা অঞ্চলে আহুত পরিবহন মালিক-শ্রমিক কর্মবিরতের প্রত্যাহারের জন্য বৈঠক করছিলাম। আলোচনার সময় আদালত সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক ড্রাইভারের ফাঁসির খবর আসে। এ সময় শ্রমিকদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। খবরটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে মালিক ও শ্রমিক নেতারা গাড়ি বন্ধ করে দিতে থাকে। এভাবে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে ধর্মঘট বন্ধের উদ্যোগ ভ-ুল হয়ে যায়। এরপর সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
গতকাল দুপুরে মতিঝিলের সড়ক ভবনে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার অনুষ্ঠানে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এ কথা বলেন। এ বৈঠকের আগে মালিক ও শ্রমিক নেতারা সড়ক ভবনে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। ধর্মঘট প্রত্যাহারের সময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ, শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু, সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীসহ বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডসভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মলনে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে শাহাজান খান বলেন, দুদিনের ধর্মঘটে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এই অচলবস্থাকে কেন্দ্র করে একটি মহল বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করা হয়েছে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত উল্লেখ করে মন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহবান জানান।
দুর্ঘটনার কারণে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার আশঙ্কায় শ্রমিকরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চুয়াযাঙ্গা ডিলাক্স ও গ্রীন লাইনের দুর্ঘটনার কারণে একটিতে ১২ কোটি ৮৮ লাখ ও অপরটিতে ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছে। আমাদের আশঙ্কা এ দুটি মামলাও আমাদের বিরুদ্ধে যাবে। এ সব বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই আমাদের সামনে এগোতে হবে।
ধর্মঘট সরাসরি প্রত্যাহার করা হচ্ছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা ধর্মঘট ছিল না। ছিল কর্মবিরতি। ধর্মঘট ডাকার আগে নোটিস দিতে হয়। যেহেতু ধর্মঘট ছিল না সে কারণে ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য আমরা আহবানও জানাতে পারি না। এ কারণে যান চলাচলের অনুরোধ করছি। দুই মন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সকল পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চলমান অচলবস্থার নিরসনকল্পে যান চলাচলের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস, আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সর্বত্র সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।
এর আগে বুধবার সাড়ে ১২টায় সেতু মন্ত্রণালয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ এক বৈঠক করেন। বৈঠকে মালিক শ্রমিকদের সমস্যার বাস্তবতা উপলব্ধি করে আশ্বস্ত করেছে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা আইনগতভাবে সমস্যার সমাধানে অগ্রসর হব। সেক্ষেত্রে সরকার আইনানুগ সম্ভাব্য সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। সম্পাদনা: এনামুল হক