‘খোদেজাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ট্রাকচালক মিরু’
মামুন খান: খোদেজা বেগমের মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত কারণে নয়। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ট্রাক ড্রাইভার মীর হোসেন মিরু। গতকাল দুপুরে পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতে রেবতি ম্যানশনস্থ ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খোন্দকার আব্দুল মান্নান তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন। আর ট্রাক ড্রাইভারকে দেওয়া ফাঁসির রায় সঠিক বলে দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট অযৌক্তিক এবং আদালত অবমাননার সামিল উল্লেখ করে আব্দুল মান্নান বলেন, পরিবহন সংগঠনগুলো সঠিক তথ্য না জেনে কারও উস্কানিতে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। সঠিক তথ্য হলো ২০০৩ সালের ২০ জুন সাভারের ঝাউচার এলাকায় ট্রাকচাপায় খোদেজা বেগমের (৩৮) নিহত হওয়ার ঘটিনাটি ছিল পরিকল্পিত। তিনি বলেন, মৃত্যুদ- পাওয়া ট্রাকচালক মিরুর বাড়ি এবং নিহতের বাড়ি একই এলাকায়। ওই ঘটনার কয়েকদিন আগে ট্রাকযোগে খোদেজা বেগমের বাড়ির পাশের একটি জমি ভরাটের কাজ করছিল মিরু। পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম থেকে মাটি এনে খোদেজার পারিবারিক একটি রাস্তা দিয়ে মাটি আনার কাজ করা হচ্ছিল।
অনুমতি না নিয়ে ও বাতাসের সঙ্গে ধুলো ময়লা ছড়িয়ে পড়ার কারণ দেখিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে মাটি আনার প্রতিবাদ জানান খোদেজা বেগম ও তার স্বামী নুরু গাজী। তারা ওই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে ট্রাকচালক মিরু এবং তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটিও হয়।
২০০৩ সালের ২০ জুন তাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই রাস্তা দিয়ে আবারও মাটির ট্রাক নিয়ে আসে মিরু। এ সময় ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দেন খোদেজা বেগম, তার স্বামী এবং প্রতিবেশীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিরু সবাইকে রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। না হলে সবার ওপর ট্রাক চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় সে।
এরপরেও তারা রাস্তা থেকে না সরলে ট্রাকচালক মিরু গাড়িতে উঠে প্রথমে ট্রাকটি একটু পিছনে নিয়ে আসেন। পরে দ্রুত বেগে এসে রাস্তায় অবস্থানকারীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দেয়। এ সময় অন্যরা রাস্তা থেকে সরে যেতে পারলেও খোদেজা ট্রাকের সামনের চাকা এবং পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। তাই এটা কোনো দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ছিল না। ছিল পরিকল্পিত হত্যাকা-।
তিনি আরও বলেন, মামলার চার্জশিটও হয় পরিকল্পিত হত্যাকা- হিসেবে দ-বিধির ৩০২ ধারায়। ৩০২ ধারায় চার্জশিট হওয়ার পরও আসামিপক্ষ দুর্ঘটনা দাবি করে উচ্চ আদালতে যাননি। এমনকি চার্জগঠন এবং আত্মপক্ষ শুনানির পরও আসামি সড়ক দুর্ঘটনা দাবি করে উচ্চ আদালতে যায়নি। আসামির এখনো উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে বলার সুযোগ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পিপি বলেন, অবশ্যই রায়ের বিরুদ্ধে পরিবহন ধর্মঘট আদালত অবমাননার সামিল। বিষয়টি আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করছি। তথ্য-প্রমাণ হাতে এলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উল্লেখ্য, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম জেলা ও দায়রা জজ প্রদীপ কুমার রায় উল্লেখিত মামলায় ট্রাক ড্রাইভার মির হোসেন মিরুর মৃত্যুদ-ের রায় দেন। মামলায় মিরুর সহকারী ইনতাজ আলীকে খালাস দেন আদালত।