৭ পরিবহন শ্রমিক রিমান্ডে গাবতলীর তান্ডবে ৩ মামলা, আসামি ১২শ
সুজন কৈরী: গাবতলীতে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য ও তান্ডবের ঘটনায় প্রায় ১২ শ’ জনের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি মামলায় ৭ পরিবহন শ্রমিকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আসামিরা হলেন পরিবহন শ্রমিক রফিকুল, হাসানুর, রবিন, সোহেল, ফজলে রাব্বি, আলামিন ও এনামুল হক। গতকাল বিকেল ৩টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর দারুস সালাম থানা এসআই যোবায়ের আলম আসামীদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামী ও বাদী পক্ষের আইনজীবিদের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আলমগীর কবির শুনানি শেষে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয়ে শালজানা গ্রামে ‘কাগজের ফুল’ ছবির শুটিং স্পট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে জোকা এলাকায় মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মনিরসহ ৫ জন। আহত হন আরও ৩ জন। ওই মামলায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের আদালত ঘাতক বাসচালক জামিরের যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় দেন। ওই রায়ের প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দিলে গত ১ মার্চ গাবতলীর তিন রাস্তা মোড়ে আসামীরা টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। পূর্বঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘটের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের জনজীবনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো দেশ। ধর্মঘট চলাকালে গাবতলীতে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে পুলিশ গাবতলী টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ার ঘোষণা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের দু’টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করাসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। এক পুলিশ সার্জেন্টকে মারধরসহ তার মোটরসাইকেলটিও পুড়িয়ে দেয়া হয়। তাদের চালানো তা-ব থেকে রেহাই পাননি রোগী বহনের অ্যাম্ব্যুলেন্সও। এছাড়া সাংবাকিদের উপরও হামলা চালানো হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া এ তা-ব চলে বুধবার সকাল পর্যন্ত। সংঘর্ষে মারা যান এক শ্রমিক। অবশেষে চাপ ও সমালোচনার মুখে বিনা শর্তে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। যানচলাচল শুরু করে।
সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার দিবাগত রাতে দারুসসালাম থানার এসআই বিশ্বজিৎ পাল ও অপর এসআই জুবায়ের এবং সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ফেরদৌসী বাদি হয়ে মামলা তিনটি দায়ের করেন। পুলিশের করা একটি মামলায় সরকারি কাজে বাধা, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে। আর ফেরদৌসির করা তৃতীয় মামলায় তার ছেলেকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার এজাহারে ফেরদৌসী উল্লেখ করেছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সুজন কাজের জন্য গাবতলী যায়। কিন্তু রাতে বাসায় না ফেরায় তিনি গাবতলী গিয়ে জানত পারেন, রাত দেড়টার দিকে এক হাজার শ্রমিক বে আইনিভাবে দলবদ্ধ হয়ে লোহার রড, ইট, লাঠি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে। এতে সুজনের মাথা ও ডান হাতে মারাত্বকভাবে জখম হয়। এছাড়া শ্রমিকরা সুজনের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে আহত করেছেন। আহত ছেলেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। এদিকে পুলিশের দায়ের করা মামলায় তাজুল ইসলাম, আবুল হাসেম, সামছুল আলম, আহম্মেদ আলী, আব্দুল সাত্তার, নসু, আবুল বাশার, কালাম মুন্সি, জুল জালাল, হাজী সুলতান, নাসির উদ্দিন, লোকমান ফরাজী, কামাল, জামাল, শাহ আলমসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত এক হাজার থেকে এক হাজার দু’শ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দারুস সালাম থানার ওসি মো. সেলিমুজ্জামান জানান, ধর্মঘটের নামে গত মঙ্গল ও বুধবার গাবতলী এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের চালানো তা-বের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলা করেছে পুলিশ। আর একটি মামলা করেছেন একজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী। পুলিশের মামলায় ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর নারীর করা মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক নেতাও রয়েছেন। সব মিলে আসামি এক হাজার থেকে ১২০০। এরমধ্যে জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, মামলায় যে ৪৬ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে এদের মধ্যে কোনো পরিবহন নেতার নাম নেই। সবাই আন্দোলনকারী (শ্রমিক)। সম্পাদনা: এনামুল হক