অস্ত্র সংগ্রহ করছে পার্বত্য অঞ্চলের সন্ত্রাসীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন
আনিসুর রহমান তপন : মিয়ানমারের আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)’র কাছ থেকে ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চরের কিছু সন্ত্রাসী সংগঠন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো গোপন তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে তৎপর বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা দেখা যচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এসব সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সীমান্ত লাগোয়া প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহের মাধ্যমে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ফলে পার্বত্য অঞ্চলের এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ নিজেদের অস্ত্রভা-ারে তাদের মজুদ বৃদ্ধি করছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত ও মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সহযোগিতায় বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে মাঝে মাঝে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের চালান প্রবেশ করছে। একই সঙ্গে সীমান্ত পথে এসব সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সংগ্রহ করছে বিভিন্ন বিস্ফোরক। যা পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতাও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ। ইতোমধ্যে গত আগষ্টে এএলপির সহযোগিতায় পার্বত্য এলাকার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ২৫টি রাইফেল ও গুলির একটি চালান সংগ্রহ করেছে বলে উল্লেখ করেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তাছাড়া গত ডিসেম্বরে মিয়ানমারের কারেণ্ট প্রদেশে এএলপির অর্থ সম্পাদক ১৬টি একে-৪৭ রাইফেলসহ স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা অস্ত্রের এই চালানটি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠিই বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে তাদের অপতৎপরতা চালাতে পারবে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কাউকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সীমান্ত দিয়ে যাতে অস্ত্রসহ অবৈধ কিছু প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্তক রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা আগামীতে নষ্টের আশঙ্কা প্রকাশ করে তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যেই ভারতের মিজোরাম থেকে বান্দরবনে ২৪টি অস্ত্রের একটি চালান আসার কথা রয়েছে। চালানটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা আট ব্যক্তির জন্য ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ত্রের এই চালান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসার জন্য সন্ত্রাসী দলের সংগ্রহ করা ব্যক্তিরা কোন পথ দিয়ে সীমান্ত পার হবে ও কোন পথ দিয়ে অস্ত্রের চালান নিয়ে ফিরে আসবে সে তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
অস্ত্রের এসব চালান যাতে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সব গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিবিড় ও নিরবিচ্ছিন্ন নজরদারির সুপারিশও করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এসব অস্ত্রের চালান পার্বত্যঅঞ্চলের সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছুলে এ অঞ্চলে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাছাড়া অস্ত্রের এসব চালান জেএসএস এর আড়ালে অন্য কোনো সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠি এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকরা আমদানি করতে পারে। এসব অস্ত্র পার্বত্যঅঞ্চলের বাইরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও নাশকতার কাজে ব্যবহার করা হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, তিন পার্বত্য জেলাসহ কক্সবাজারের দুর্গম এলাকার পাহাড়ি সীমান্ত এখনও অরক্ষিত। বিভিন্ন নামে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সবচেয়ে বেশি অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এছাড়াও ছোটবড় আরো কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ পাহাড়ে সক্রিয় রয়েছে।
এসব কারণে বাংলাদেশ-ভারত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অরক্ষিত পাহাড়ি অঞ্চলের ৩৬৯ কিলোমিটার এলাকায় সজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। সম্পাদনা: রাশিদ