মোহাম্মাদি ইসলাম ও ইয়াজিদি ইসলাম
সৈয়দ রশিদ আলম
ইদানিং একাধিক ইসলামিক দল সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করছে। এই ইসলামি দলের সংখ্যা কত একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানেন না। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) প্রেম ও ভালোবাসার সঙ্গে যে ইসলামের বাণী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন সেটা তার ওফাতের পর আস্তে আস্তে ম্লান হতে থাকে। মুসলমান শাসকরা ভোগবাদের দিকে যত আগাতে থাকে ততবেশি ত্যাগের শিক্ষা থেকে দূরে যেতে থাকে। বিশেষ করে ইয়াজিদ যখন ক্ষমতা দখল করল তখন নবী পরিবারের নূর, ইমাম হোসাইন (রা.) প্রতিবাদ জানালেন। তিনি ইয়াজিদকে মদ পান থেকে, ব্যাভিচার থেকে, ভোগবাদী থেকে, সুদ থেকে মুক্ত থাকার আহ্বান জানালেন। কিন্তু পথহারা ইয়াজিদ ইমাম হোসাইন (রা.) এর আহ্বানে সাড়া দিলেন না। পৃথিবীর কোনো নিষ্ঠুর শাসক কোনোদিনই সত্য পথের আহ্বান গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের ধর্ম যাই হোক না কেন, তাদের ধর্ম একটাই অত্যাচারের মধ্যে ডুবে থাকা। কারবালা প্রান্তরে নবী পরিবারের গোলাপ ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার পর ইয়াজিদ ইসলামের নামে মক্কা-মদিনায় সীমাহীন অত্যাচার চালিয়েছিল। যারা এর প্রতিবাদ করেছিলেন তাদেরকেই মরতে হয়েছিল। আর যারা প্রতিবাদ করেননি তারা ইয়াজিদের কাছে থেকে নানা ধরনের উপহার পেয়েছিলেন।
ইয়াজিদি ইসলামটা হচ্ছেÑ হত্যা করে যাওয়া, ধর্ষণ করে যাওয়া, অন্য ধর্মের মানুষকে মানুষ মনে না করা, ধর্মের নামে হাত কেটে দেওয়া, পা কেটে দেওয়া, গলা কেটে দেওয়া, অন্যের সম্পদ দখল করে নেওয়া, নারী জাতির জাতিকে ভোগের সামগ্রী মনে করা। কিন্তু মোহাম্মাদী (স.) ইসলাম হচ্ছেÑ নারী জাতিকে মায়ের জাত মনে করা, হত্যা না করা, ধর্ষণ না করা, ব্যাভিচার না করা, অন্যের সম্পদ দখল না করা, সংখ্যালঘুদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে যাওয়া। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক মুসলিম দেশ রয়েছে। এই মুসলিম দেশগুলোর নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের প্রতিবেশী কিছু দেশ যেমনÑ ইয়েমেন, সুদান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছেন। কিন্তু সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আরব-আমিরাত ও বাহারাইন এর মুসলিম শাসকরা এইসব গরিব দেশের নাগরিকদের কল্যাণে কখনোই পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।
উল্লেখিত দেশের রাজ পরিবারের রয়েছে শতশত কোটি ডলারের রাজপ্রাসাদ, ব্যক্তিগত বিমান, নিজস্ব বিমানবন্দর, স্বর্ণের তৈরি বাথরুম। এই ভোগবাদীরা নিজেদের মোহাম্মাদী (স.) ইসলামের অনুসারি দাবি করলেও এরা মূলত ইয়াজিদি ইসলামের অনুসারি। আর ইয়াজিদি ইসলামের অনুসারিরা ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতি, বস্ত্রহীন মানুষের প্রতি, গৃহহীন মানুষের প্রতি দয়া দেখাবে না এটাই স্বাভাবিক। এরা গরিবদের বলবে তোমরা দুনিয়ায় কষ্ট করছ পরকালে তোমাদের জন্য সুখ রয়েছে। আর আমরা যারা ইয়াজিদি ইসলামের অনুসারি আমরা এই দুনিয়াতেও স্বর্গতে থাকব ও মৃত্যুর পরও স্বর্গেই থাকব। অর্থাৎ গরিব মানুষ দুনিয়ায় খাবার পাবে না, চিকিৎসা পাবে না, থাকার জায়গা পাবে না পাবে যখন তার চোখ বন্ধ হয়ে যাবে তারপর যা পাবে মৃত্যুর পর অর্থাৎ বাকিতে। আর ইয়াজিদি ইসলামের অনুসারিরা স্বর্ণের তৈরি বাথরুমে মলত্যাগ করবেন আর স্বর্গের আশা করবেন কারণ, ইয়াজিদির আমলে যেসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইয়াজিদির পক্ষে ছিলেন সেই রকম ধর্ম ব্যবসায়ী এখনো আছেন এরাই ভোগবাদী রাজা-বাদশাদের পক্ষে ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকে রক্ষা করার জন্য একের পর এক কল্পকাহিনী তৈরি করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশ থেকে যেসব দরিদ্র পরিবারের সন্তান মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশার দেশে কর্মের জন্য যাচ্ছেন তাদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করা হচ্ছে। নারীদের ভোগের সামগ্রীতে পরিণত করা হচ্ছে। সবকিছুই করা হচ্ছে ধর্মের নামে। যেদিন পৃথিবীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর প্রকৃত শিক্ষা পৌঁছে যাবে সেদিন মধ্যেপ্রাচ্যের রাজা-বাদশারা ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হবেন। ন্যায়পরায়ণ শাসকরা সারা পৃথিবী শাসন করবেন। তাদের কাছে পৃথিবী সকল ধর্ম বিশ্বাসীরা একই রকম সহানুভূতি পেতে থাকবেন, ভালোবাসা পেতে থাকেন, সুযোগ-সুবিধা পেতে থাকবেন যা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এর মূলশিক্ষা।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান