ছবি-পোস্টার-ফেস্টুন রাজনীতি করে কি নেতা হওয়া যায়?
রবিউল আলম
সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ও মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য রাজনীতি করতে হয়। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কিছু মানুষ রাজনৈতিক প্লাটফর্মে আসেন ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজকে রক্ষা করতে। আর কিছু মানুষ ঐক্যবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যম খোঁজেন। এই অবৈধ উপার্জনকারীরা এখন অভিনব উপায় আবিষ্কার করে নিয়েছেন নিজেকে রক্ষায়, সরকারের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আলহাজ্ব মো. সাদেক খানকে একের পর এক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার দুই মেয়র অবৈধ পোস্টার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে চলেছেন মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে, কিন্তু থামানো যাচ্ছে না ছবি বা পোস্টার রাজনীতি। কারা করছে এই পোস্টার রাজনীতি? খেয়াল করলে দেখবেনÑ এরা আর কেউ নয়, সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে, সরকারি দলের সঙ্গে মিশতে, সমাজকে অস্থির করতে, বিএনপি-জামায়াতের কিছু প্রেতাত্মা, প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করতে বড় বড় ফেস্টুন-বিলবোর্ড দিয়ে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে ব্যবহার করছে জাতীয় নেতাদের ছবি। দলীয় পদ-পদবি না থাকলেও নামের নিচে লেখা থাকে নেতা। তারা কিসের নেতা, জানি না। এখন এই অবস্থা চলছে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য।
আওয়ামী লীগ বলেছিল, বিলবোর্ড-ফেস্টুন ও ছবি ব্যবহার করতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুমতি লাগবে। যাদের পদ হারানোর ভয় আছে, দলের ক্ষতি হোক চান নাÑ দল, দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য যারা রাজনীতি করেন তাদের মধ্যে রাজনীতি ও দল নিরাপদ আর যারা সরকারকে অস্থির করতে ইয়াবা ব্যবসা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি করতে সরকারি দলের সঙ্গে মিশতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধোকা দিতে পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ব্যবহার করছেন তারা অনুমতি নিবেন কার কাছ থেকে, তারা তো দলের নেতাদের চিনেনও না, আমরাও তাদেরকে চিনি না। শুধু পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড দেখি। ফেসবুক, ইন্টারনেটের বদৌলতে ছবির অভাব হয় না, যার যেমন খুশি ছবি ব্যবহার করছে, সংগঠনের নাম ব্যবহার করছে। জানি না সেই সংগঠনের সঙ্গে আদৌ ওই নেতা আছে কি না এবং ওই সংগঠনের নেতারা তাকে চেনেন কি না। একটি উদাহরণ দিতে চাই, গাবতলী হাটের সন্ত্রাসী কালা মইজাকে কখনো দেখেননি আলহাজ মো. সাদেক খান তাকে চেনেন না বা দলের কোনো পদেও নেই।
মইজা সারাজীবন আওয়ামী লীগ বিরোধী কর্মকা- করে চলেছেন, মাংস ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের পরে পুলিশ যখন তার হিসাব নিতে প্রস্তুত তখন উপায়ন্তর না দেখে এমপি আসলাম, ঢাকার দুই মেয়রের ছবি দিয়ে গরুর ব্যাপারী সমিতির নামে ফেস্টুন করে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়াতে ব্যবহার করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি, ছবি ব্যবহারের অনুমতি তো দূরের কথা আলহাজ মো. সাদেক খান তার নামটিও জানেন না। মাদক সাম্রাজ্যের ছবি ব্যবহারের অভিনব কায়দার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ওবায়দুল কাদের, সাদেক খান যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। অনেক কষ্ট করছে অবৈধ ছবির ব্যবহার ঠেকাতে, জনগণের মাঝে একটু শান্তি ফিরিয়ে দিতে, সমাজে অশান্তি সৃষ্টির মাদক প্রতিরোধে, সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে দল পুনর্গঠনে আত্মউৎসর্গ করেছেন, সেই মুহূর্তে ওরা জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে অমুক লীগ, তমুক লীগ নাম লিখে জাতীয় নেতাদের ছবি দিয়ে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। আমার ওয়ার্ড ৩৪ এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি, অনেক শান্তি, সামাজিক অবস্থান ও ঐক্যবদ্ধ আমরা আলহাজ সাদেক খানের বাসস্থান এই ওয়ার্ডে, আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছিলাম খান পরিবার সামাজিক দায়িত্ব ও নেতৃত্ব পালন করছেন, কখনো কোনো উচ্ছৃঙ্খলতা দেখিনি, এমনকি বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন রায়ের বাজারকে ছুঁতে পারেনি সাদেক খানের দৃঢ় নেতৃত্বের গুণে। আজ হঠাৎ করে গজিয়ে উঠেছে কিছু মাদক সম্রাট, অশান্ত করে তুলেছিল জননেত্রী সৈনিক লীগ নাম দিয়ে, ব্যবহার করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মতো একটি মহান সংগঠনের নাম, মাদক সম্রাট হাবিবুর রহমান হাসুকে আমরা প্রতিরোধে জনতা ও পুলিশ সহযোগিতায় এগিয়ে আসায় অপশক্তি প্রতিরোধ করতে পেরেছি বলেই মনে হয়। তবে আপাতকালীন নয়, আমরা স্থায়ী সমাধান। এটা বাস্তবায়ন করতে হবে প্রশাসনকেই।
বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে যদি সাদেক খানের মতো আপোসহীন নেতার জন্ম হতো, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসতেন তবে আওয়ামী লীগ নিরপাদ হতো, সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও সুনাম রক্ষা করা যেত। কাদের ভাইয়ের ভাষায় বলতে হচ্ছে, শুধু খাই খাই করে কি আর রাজনীতি করা যায়, রাজনীতির জন্য ত্যাগের প্রয়োজন, দলের জন্য, জনগণের জন্য, দেশের জন্য ত্যাগের বিকল্প নেই, ত্যাগ ছাড়া মানুষের মনে জায়গা পাওয়া যায় না। মহামানব তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগ ছবির রাজনীতি জানে না, সাদেক খান তো মানেনই না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের মনের মাঝে ছবি আঁকতে পারলে, তার পোস্টার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড লাগে না নির্বাচন করতে। নেতা হতে তাই সামাজিকভাবে দায়িত্ববান। এর বিকল্প নেই। গুটিকয়েক সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, দখলবাজরা সমাজকে অস্থির করতে পারে না। যারা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, দলের দায়িত্ব নিয়েছেন, কাউন্সিলর হয়েছেন তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। ছবি সব স্থানে ব্যবহার করতে দিবেন না। এতে আমরা যারা দল করি বিব্রত হই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিব্রত হয়। সমাজে প্রশ্ন ওঠে, শান্তিপ্রিয় জনগণ অশান্তি ভোগ করে। আবারও বলছি, ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। দল, দেশ ও সমাজকে রক্ষা করুন, তবেই আপনার নেতৃত্ব প্রশংসিত হবে সব মহলে।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান