ডিসি কার্যালয়ে স্বতন্ত্র ‘সোর্স মানি ফান্ড’ গঠনের পরিকল্পনা
আনিসুর রহমান তপন: জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে আগাম ও সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার লক্ষ্যে পৃথক ‘সোর্স মানি ফান্ড’ গঠনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে মাঠ প্রশাসন থেকে সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। নিজস্ব সোর্স না থাকায় এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনকে তথা মাঠ প্রশাসনকে বিভিন্ন সংস্থা এবং উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় দেখা গেছে, বিভিন্ন সংস্থা এবং উৎসগুলো থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। ফলে তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত হয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার সঠিক চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। একারণে ডিসি কার্যালয়ে নিজস্ব সোর্স দিয়ে সঠিক ও নির্র্ভুল তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র ‘সোর্স মানি ফান্ড’ গঠনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, প্রকাশ্য জুয়া আইন ও ইভটিজিং নিয়ন্ত্রণ আইনের মতো আরো কিছু আইন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই সময়ক্ষেপনসহ অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারেনা মাঠ প্রশাসন। অধিকন্তু স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ঘটনার তদন্তের স্বার্থেও নিরপেক্ষ ও সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া দেশের প্রান্তিক ও দুর্গম অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে ও সরকার পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে অগ্রগতি সম্পর্কে মাঠ প্রশাসনকে প্রতিনিয়ত অবহিত থাকার গুরুত্ব রয়েছে।
এসব বিষয় বিবেচনায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নীতি নির্ধারণ, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী বরাবর সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য দ্রুততার সঙ্গে প্রাপ্তির লক্ষ্যে ডিসি কার্যালয়ে স্বতন্ত্র ‘সোর্স মানি ফান্ড’ গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অণুবিভাগ) ‘সোর্স মানি ফান্ড’ গঠনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে আমাদের অর্থনীতিকে জানান, ইতোমধ্যে আমরা মাঠ প্রশাসন থেকে এ ধরনের প্রস্তাব পেয়েছি। এখন নয়, মাঠ প্রশাসন থেকে আরো কিছু একই প্রস্তাব পাওয়া গেলে পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, একটি জেলা, উপজেলাসহ নির্দিষ্ট এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা একজন ডিসির অধীনে থাকে। একজন ডিসি একটি জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি। ফলে স্বভাবতই জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে জেলার সার্বিক নিরাপত্তা দেখভাল করে থাকেন ডিসি। একারণে জেলায় কোনো অঘটন বা দুর্ঘটনা ঘটলে ডিসিকেই এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উইপন ‘মোবাইল কোর্ট’ পরিচালনা। দেশের নিয়মিত আদালতে একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মামলা সহজেই কম সময়ে নিষ্পত্তি করা যায়। তিনি বলেন, তাছাড়া সরকারের অন্যান্য বাহিনী সরকারের প্রচলিত কিছু বিধানের মাধ্যমে ‘সোর্স মানি’ ব্যবহার করে থাকে। এতে তারা নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত সংগ্রহ করতে পারে। তাই ডিসি কার্যালয়েও যদি ‘সোর্স মানি’ হিসেবে কিছু টাকা বরাদ্দ করা যায় তবে সেটাও জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা সম্ভব। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এখনও মতামত পাওয়া যায় নাই। সবার মতামত পাওয়ার পর সরকার অনুমতি দিলেই ডিসি কার্যালয়ে স্বতন্ত্র ‘সোর্স মানি ফান্ড’ গঠন করা যেতে পারে। জনস্বার্থের অনুকূলেই থাকবে বলে আমি মনে করি। এ অর্থ দিয়ে অন্যান্য বাহিনী যা করে মাঠ প্রশাসনও তাই করবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠ প্রশাসনে এমন প্রস্তাব চেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, প্রয়োজনীয় বিষয় ডিসিদের জানাতে বলেছি কয়েকটা প্রস্তাব পেয়েছি। সবগুলো পাওয়া গেলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, দাঙ্গাহাঙ্গামা, মাদক পাচার-অপব্যবহার বা সন্ত্রাসী তৎপরতার খোঁজ যদি আগে-ভাগেই সোর্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারে সেক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসন সর্বসম্মতভাবে দ্রুত এ্যাকশন নিতে পারবে। এতে জনস্বার্থ রক্ষা সম্ভব হবে। তাই বলা যায় বিভাগীয় পর্যায়ে ‘সোর্স মানি ফান্ড, গঠন করা গেলে এটি শতভাগ জনস্বার্থে প্রয়োগ হবে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি