দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হবে, সমঝোতা হবে না!
গোলাম মাওলা রনি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিতর্ক করছে। যার যার মতো করে বক্তব্য রাখছে। বিএনপি বলছে, সহায়ক সরকার ছাড়া এবং আওয়ামী লীগের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাবে না। আর আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আমার কাছে মনে হচ্ছেÑ বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয়ই রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগ জানে না যে আসলে নির্বাচনটা কবে হবে। ২০১৯ সালে হবে, নাকি তার আগেই হবে। এটা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কিভাবে করতে চায় এ ব্যাপারেও আওয়ামী লীগ এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এটাই বাস্তবতা। একইভাবে বিএনপিও এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তারা কি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে করবে, ৫ জানুয়ারির মতো একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে। ফলে আমাদের চোখে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়ই এখন একটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত তখনই আসবে যখন এই দুটো দল একটেবিলে আলোচনায় বসবে। আর সেদিনই ধরে নেওয়া যাবে যে, আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপিও চায় আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। যতক্ষণ না পর্যন্ত উভয় দল আলোচনার টেবিলে না বসতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যে বক্তব্য দিচ্ছে এই বক্তব্যের কোনো মূল্য নেই। রাজনৈতিক স্বার্থে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই তারা এই বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যার কোনো বাস্তব মূল্য বা ভিত্তি কোনোটিই নেই।
দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই। সরকার বা আওয়ামী লীগ বিদেশি চাপটাকে এমনভাবে ম্যানেজ করেছে যে, সরকারকে চাপ দেওয়ার মতো কার্যত এখন কোনো বিদেশি শক্তিও নেই। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো শক্তি হারাতে হারাতে এমন একটা অবস্থায় চলে গেছে যে, রাজপথে সরকারকে নাস্তানাবুদ করবে ওই অবস্থাও বিরোধী দলগুলোর এখন নেই। ফলে রাজনৈতিক যে সমঝোতা তা একান্ত সরকারের দয়া-মায়ার উপর নির্ভরশীল। সরকার তো দয়া করে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবে না।
দুই দলের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সামনের দিনে রাজনৈতিক মাঠে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাই রয়েছে। নেতিবাচক সম্ভাবনা যেমন আছে, ইতিবাচক সম্ভাবনাও রয়েছে। নেতিবাচক সম্ভাবনা হলোÑ জনগণ যেকোনো সময় বিক্ষুব্ধ হতে পারে, তার ফলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যেতে পারে। আর ইতিবাচক দিক হলোÑ জনগণ সহ্য করতে করতে এমন একটা পরিস্থিতি এসে দাঁড়াতে পারে যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া এ দেশ কেউ চালাতে পারবে না। আওয়ামী লীগ যেভাবে চালাচ্ছে সেভাবেই চলুক। বিএনপির দ্বারা কিছুই হবে না।
পরিচিতি: সাবেক সাংসদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
অনুলিখন: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান