ভালোর চেয়ে প্রভুতে অনিষ্ট অধিক
অজয় দাশগুপ্ত
এ লেখা যখন লিখছি তখনো বেগম জিয়ার সঙ্গে ব্রিটিশ রাজদূতের দেখা হয়নি। তবে হবে। এর আগে আমেরিকার দূতও দেখা করেছেন। পরনির্ভর বিদেশিদের মদদ চাওয়া রাজনীতিতে জনগণের বদলে এখন প্রভু ভজনার কাল। আর এটা আমরা সবাই জানি এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ে এগিয়ে বিএনপি। বলছি তারা যতটা প্রশ্রয় পায় বা কোলে উঠতে পারে লীগ পারে না। এর কারণ ইতিহাস। যাদের মুরুব্বি বলা হয়, একদা যাদের কথায় দুনিয়া উঠ-বস করত তারা জাতীয় চেতনা বা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দল বা নেতাদের চায় না। যে কারণে নেহেরু, সুকর্ণ টিটো কিংবা মান্দেলা বা শেখ মুজিব তাদের পছন্দ না। তারা এদের উৎখাত এমনকি বিনাশও চেয়েছিল। আমাদের দেশে তারা যেভাবে ও যাদের মাধ্যমে তা করতে পেরেছিল সে পুরনো বন্ধুকে কি চাইলেই ভোলা যায়?
তার উপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা শোনেন না। জন কেরির ফোন বা বিদেশিদের কথা কানে না নিয়ে ঘাতক-দালালদের বিচার ও শাস্তি দিয়েছেন তিনি। ফলে দাবার ছকে গণেশ উল্টানোর চেষ্টা হতেই পারে। যা হবার তা হবেই। আওয়ামী লীগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও গুটিকয় নেতা ছাড়া বাকিদের কাজে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। সব লেভেলে খাওয়ার ধুম পড়ে গেছে। সেদিন দেখি তরকারি লীগও নাকি গঠিত হয়েছে দেশে। শেখ হাসিনা না জানতে পারেন সম্পাদক বা অন্যরাও জানেন না? এই যে দলের নামে মশকরা, দলকে ছোট করা এর দাম চুকাতে হবে একদিন।
ভোট হলে বা ভোটে জিততে হলে রাজনীতিও নিজের দলের দেখভাল করাই কাজের কাজ। নানা কারণে মানুষের যে বিশাল অংশ লীগ বিরোধী বা সরকার বিরোধী তার কাছে না গিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটা নিয়েই ব্যস্ত সরকারি দলের নেতারা। সম্পাদক বলছেন নিবন্ধন বাতিলের। ভয়ে নাকি তারা আসবেই। তারা এলো না কারা গেল সেটা বলা জরুরি নাকি নিজেদের ভুল শুধরে গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নামা দরকার? বিএনপিকে জনগণ চাইলে আমরা না বলার কে? তাদের যত হতদ্যম আর শেষ ভাবা হোক আসলে তা নয়। সাইলেন্ট মেজরিটির খবর জানে বলেই বিদেশিরা উভয়দিকে লাইন বজায় রাখে। ভারতও তা করতে সময় নেবে না।
আমাদের ভয় বা উদ্বেগের কারণ বিএনপির জয় পরাজয়ে নয়, যারা গদিতে এলে এবার মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের চেহারা পাল্টে দেবে, যারা প্রতিশোধ নিতে কয়েক হাজার রায়েরবাজার বানাবে, যারা সোনার বাংলা তোমায় ভালোবাসি বাতিল করে পাকি কায়দায় দেশ চালাবে আমরা তাদের ভয়ে আছি। রাজনীতিহীন সমাজে ডান-বাম সবাই যখন সাইজড তখন দুশমন ছাড় পেলে দৈত্য হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই নিয়মের রাজনীতি গণতন্ত্রের পথে দেশে সমঝোতা ও উন্নয়নের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনাই এখনো শেষ ভরসা। অস্তগামী খালেদা জিয়ার শুভবুদ্ধিও দরকার। মনে রাখতে হবে বিদেশিরা এখন যত অনিষ্ট করে তত ভালো করতে পারে না।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান