কর্মবিরতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
ডেস্ক রিপোর্ট: চার শিক্ষানবিস চিকিৎসকের শাস্তি মওকুফের দাবিতে বগুড়ার পর আরও পাঁচ মেডিকেলে কর্মবিরতিতে নেমেছেন তারা। শনিবার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জের নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের শাস্তি ঘোষণা করলে ওইদিন দুপুরের পর থেকে বগুড়া মেডিকেলে কোনো ঘোষণা ছাড়া তারা কাজে আসছেন না।
গতকাল শনিবার সকালে বগুড়া মেডিকেল কলেজের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধনে
তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আলাউদ্দিন সরকার নামে এক রোগীর ছেলে ও দুই মেয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের শিকার হন। ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর ২ ফেব্রুয়ারি চার ইন্টার্ন চিকিৎসককে শাস্তির ঘোষণা আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে।
চারজনের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। ছয় মাস পরে তাদের চারজনকে অন্য চারটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করতে বলা হয়। শাস্তিস্বরূপ এই কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি আল মামুনকে খুলনা মেডিকেল, নূরজাহান বিনতে ইসলাম নাজকে দিনাজপুর মেডিকেল, মো. আশিকুজ্জামান আসিফকে ফরিদপুর মেডিকেল ও কুতুবউদ্দিনকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে।
এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছিলেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে গতকাল শনিবার। তাদের সাত দফা দাবিগুলো হলো- চারজনের শাস্তি প্রত্যাহার, ওই ঘটনায় রোগীর চিকিৎসকদের সঙ্গে ‘খারাপ ব্যবহারকারী’ রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার, অতিরিক্ত আনসার নিয়োগ, মেডিকেল ফাঁড়িতে সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ, কোনো ঘটনা ঘটলে হাসপাতাল প্রশাসনের উদ্যোগে মামলা দায়ের করা এবং মামলা না করলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পদত্যাগ।
সকাল ১০টায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানববন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরুর ঘোষণা দেন। দিনাজপুর মেডিকেল হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ দিনাজপুর শাখার সভাপতি আশফিকার রহমান শামস ঘোষণা দেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষানবিস চিকিৎকদের বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তি প্রত্যাহার করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। কর্মবিরতির কারণে হাসাপাতালের চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে চিকিৎসকরা অতিরিক্ত সময় দিচ্ছেন বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. শাহাদৎ হোসেন খন্দকার জানিয়েছেন।
খুলনার ইন্টার্ন চিকিৎসকরা গতকাল দুপুর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, প্রশাসন রোগী ও চিকিৎসককে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা চালিয়ে নেওয়া কঠিন। ‘এ কারণে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট করতে বাধ্য হচ্ছেন।’ সিরাজগঞ্জের নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে গতকাল দুপুরে মানববন্ধনের পর কর্মবিরতি শুরু হয়। রাজশাহীতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে পড়ে রোগীরা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গতকাল সকাল ৮টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মানববন্ধন করে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের মুখপাত্র আবু রায়হান সাংবাদিকদের বলেন, বগুড়ার চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের শাস্তি মওকুফ করে কর্মস্থলে বহালের দাবিতে ‘সারাদেশে’ ইন্টার্নদের যে কর্মবিরতির কমসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়েছে।
সকাল ৮টা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিসহ হাসপাতালের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। রংপুর ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ফারহান রহমান বলেন, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের শাস্তি প্রত্যাহারসহ তাদের নিজেদের কর্মস্থলে বহাল রাখার দাবিতে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। সম্পাদনা: এনামুল হক