এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন নির্বাচনি সরকার ইস্যুতে অনড় আ.লীগ-বিএনপি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জাতীয় সরকার হলেও নির্বাচনে অংশ নিবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির দাবি নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেহেতু তার মনের মতো হয়নি এবং তাকে যোগ্য মনে করছেন না। তার প্রতি আস্থা আনতে পারছেন না। তার অধীনে সুষ্ঠুু নির্বাচনে হবে না , এই কারণে তারা মনে করছেন কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিবেন না। বিএনপির কাছে খবর রয়েছে, সরকার বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার চেষ্টা করবে। এই জন্য বিএনপির উপর নানাভাবে চাপ তৈরি করবে। আন্দোলনও করতে দিবে না। নির্দলীয় সরকার গঠন করবে না। সরকার পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন করতে না পারলে তখন শেখ হাসিনাকে সরকার প্রধান করে তার অধীনে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। ওই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। বিএনপি সেই রকম হলেও মেনে নিবে না। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনের কোনো সরকারে ও তার অধীনে জাতীয় সরকারও মেনে নিবে না। নাম যাই হোক নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। বিএনপি যাই বলুক নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অনঢ় অবস্থানে সরকার। সরকার নির্দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করবে না। আবার শেখ হাসিনাকে সরকার প্রধানের পদ থেকে বাদ রেখেও কোনো নির্বাচন করবে না। নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার অধীনের সরকারের অধীনেই। এ ব্যাপারে সরকার অনঢ় অবস্থানে রয়েছে।
সরকারের নীতিনির্ধারক একজন মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি কি চাইলো না চাইলো সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু তাদের ভুলের মাশুল সরকার দিবে না। আর বর্তমান সরকার ভেঙে দিয়ে অন্য কোনো সরকারও করা হবে না। জাতীয় সরকারও হবে না। বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। না হলে তারা যদি আবার ভুল করতে চায় করবে। সেখানে সরকারের দায় থাকবে না। কারণ বিএনপির ভুলের দায় সরকারের নয়। তাদেরকে সংবিধান মানতে হবে। সংবিধান মানতে হলে সংবিধানের মীমাংসিত বিষয় হলো নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এর বাইরে অন্য কোনো সরকারের সুযোগ নেই। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি বিএনপি স্বপ্ন দেখতে পারে নির্দলীয় সরকারের। কিন্তু সেটা হবে না। সংবিধানে সরকারের যে রূপরেখা রয়েছে তাই থাকবে। আর এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। তা আসুক কিংবা না আসুক। আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারবো না।
বিএনপির সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি এটা বুঝতে পেরেছে তাদেরকে সংসদে থাকা প্রয়োজন। বিএনপির বেশির ভাগ নেতা মনে করছেন, বিএনপির সামনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফের সংসদে ফিরে আসা ও রাজনীতিতে আরও গুরত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করার জন্য একটি বড় সুযোগ। তারা সেটি হাত ছাড়া করতে চাইছে না। এই জন্য তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছে। এই জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানও নির্বাচনের জন্য দল গোছাচ্ছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে বিকল্প চিন্তাও রাখছেন মাথায়।
সূত্র জানায়, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের দলের নিবন্ধন বাতিল হবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এই অবস্থায় বিএনপি নিবন্ধন বাতিলের ঝামেলাতেও যেতে চাইছে না। তারা চাইছে সরকারকে নির্দলীয় সরকার গঠনের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা এবং সরকারের উপর যে কোনো উপায়ে চাপ তৈরি করা। সেটা করার জন্য তারা পরিকল্পনা করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে ও শেখ হাািসনার অধীনে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে না। সরকার সেই রকম পরিকল্পনা করলেও সফল হবে না।
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আগামী নির্বাচনে না গেলে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল হওয়ার ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে পা দেবে না। বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আসতে হবে, নাহলে নিবন্ধন বাতিল হবে- এই ভয় দেখানো হচ্ছে। এতে লাভ হবে না। প্রহসনমূলক নির্বাচনের ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সরকারে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের যতই ক্ষমতা থাকুক না কেন, দলীয় সরকারের অধীনে কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে না। জাতীয় নির্বাচনের সময়ে কোন সরকার থাকবে, তার উপর নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনমূলক নির্বাচন সরকার করতে চাইছে। আমরা সেটাতে পা দেব না। এমন নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না। জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। তার দাবি আওয়ামী লীগের অধীনে কমিশন অসহায়। সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সরকারের নীতিনির্ধারক একজন মন্ত্রী বলেন, বিএনপি নানা কৌশলে আন্দোলনের সুযোগ খুঁজছে। আমরা তা দিতে পারি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রতিহত করবে যদি তারা আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে দেশের পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা করে। দেশের মানুষের জানমালের ক্ষতি করে। এ ব্যাপারে সব সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বিএনপির ভয়ে ভীত। এই জন্য সকল রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বিএনপি আন্দোলনের সুযোগ পাচ্ছে না। সরকার বিএনপিকে গণতান্ত্রিক সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত করছে। সেই বঞ্চনা সহ্য করবে না দেশের মানুষ। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী দিনে অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সবাই মিলে সরকার যে আবারও ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচন করতে চাইছে সেটা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিয়ে ও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছি। এ ব্যাপারে সরকার সময় দিলেই আলোচনা শুরু হতে পারে। আর সংলাপ ও আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটা সরকারকে মনে রাখতে হবে। সরকার এখন যত কথাই বলুক না কেন সমঝোতায় আসা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেছেন, নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করেই আমরা ইনশাল্লাহ নির্বাচন করব, সেখানে নিবন্ধন বাতিলের প্রশ্ন উঠবে না। সেই পরিস্থিতিতে দিকে যদি সরকার এদেশকে ঠেলে দেন, তা হলে তার জন্য এই সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে, শেখ হাসিনা দায়ী থাকবেন। বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তত। অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যে কোনো সময়ে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। সরকার মামলা দিয়ে দেশনেত্রী উপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে আমাদেরকে দুর্বল করতে চায়। এই চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। সহজ পথে আসুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন। নাহলে অতি শিগগিরই গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হলে বিএনপি অংশ নেবে। নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে, সেই রকম নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিশ্চয়ই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। বিএনপি যদি না আসে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। এই প্রসঙ্গে বলেছেন, আরে রেজিষ্ট্রেশন কী? আওয়ামী লীগ যখন ’৭৯ সালে, ’৮৬ সালে নির্বাচনে গিয়েছিল, কোন রেজিস্ট্রেশনের উপরে নির্বাচনে গিয়েছিল? মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই রেজিস্ট্রেশন প্রথা চালু করেছিল। বিএনপিকে এমনভাবে বাঁধ তারা যাতে তাদের পাতানো নির্বাচনে, প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে থাকে। আর আজীবন ক্ষমতার রাজ সিংহাসনে শেখ হাসিনা রাজত্ব করবে। সম্পাদনা: এনামুল হক