‘আল্লাহর কি লীলাখেলা আমি ঢাবির চ্যান্সেলর’
নিজস্ব প্রতিবেদক: যেকোনো সভা বা আলোচনাতে শ্রোতাদের প্রাণবন্ত রাখতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের জুরি নেই। এ কথাটি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তনে আবারও প্রমাণ দিলেন। রাষ্ট্রপতির অনানুষ্ঠানিক বক্তব্য যে স্বভাব-সুলভ হাস্যরসে ভরপুর থাকে সেটা এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্তদের শোনালেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
নিজের ভাগ্যের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আল্লাহর কি লীলাখেলা আমি এখন ঢাবির চ্যান্সেলর। অথচ একদিন আমার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ বলে ভর্তি তো দূরের কথা আমাকে ভর্তির ফরম পর্যন্ত দেয়নি। তিনি বলেন, আমি ১৯৬১ সনে ম্যাট্রিক পাস করি, থার্ড ডিভিশন পেয়ে। আর ইন্টারমিডিয়েটেও এক বিষয়ে রেজাল্ট খারাপ ছিল। এরপর আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি। আমার বন্ধু-বান্ধব অনেকে এখানে ভর্তি হইল, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে তখন আমি যুক্ত। ভর্তি যখন হইতে পারলাম না, তখন দয়ালগুরুর কৃপায় গুরুদয়াল কলেজে (কিশোরগঞ্জে) ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেলাম।
আবদুল হামিদ বলেন, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করতাম। প্রায়ই ঢাকা আসতে হতো। বিভিন্ন হলে থাকতাম। এমন কোনো হল নেই তখনকার সময়ে যেখানে ঢুকিনি। অবশ্য রোকেয়া হলে ঢুকিনি, তবে রোকেয়া হলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলাম। এখানে আমার যেসব বন্ধু-বান্ধব পড়ত তারা কনভোকেশন ক্যাপ-গাউন পরত। আমাদের কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকলেও সমাবর্তনে আমাদের ডাকা হতো না। যারা অনার্স-মাস্টার্সে ছিল, তাদের ডাকা হতো। কনভোকেশনে ক্যাপ-গাউন পরার খায়েস ছিল। চ্যান্সেলর হওয়ায় প্রায়ই সমাবর্তনে যেতে হয়। দেড়-দুই ঘণ্টা ক্যাপ-গাউন পরে থাকতে হয়। আর এর মধ্যে বাতাসই ঢুকতে পারে না। গরম যখন থাকে তখন অবস্থা কাহিল বলেন রাষ্ট্রপতি।
এ সময় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে শীতের সময় সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ। আবারো নিজের ছাত্রজীবনের প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৬৯ সালে বিএ পাস করেছি। বারবার পরীক্ষা দিয়েও ফেল করার পরে আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই বিএ পাসের বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা শুরু করল। ছাত্র খারাপ ছিলাম শুধু তাই নয়, দুই দুই বার কারাগারেও ছিলাম। তখন কিশোরগঞ্জের এক সমাবেশে ঘোষণা করি, যতদিন পর্যন্ত আইয়ুব খান ও মোনায়েম খানকে উৎখাত করা যাবে না ততদিন আমি বিএ পাস করব না। এরপর আর আত্মীয়-স্বজনরা আমার বিএ পাসের কথা জিজ্ঞেস করত না কারণ তাদের উত্তর হয়ে গেছে।
গলা বসে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে না হলে আরও কথা বলতে পারতাম উল্লেখ করার সঙ্গে সঙ্গেই সমাবর্তনে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার মধ্যে থেকে উচ্চস্বরে ‘আরও বলেন, আরও বলেন, রব ওঠে।
পরে রাষ্ট্রপতি বলেন, লিখিত বক্তব্য আছে… আসলে মনের কথা লেখা…। আমরা প্রেমপত্র লিখতাম… তখন বিভিন্ন বই থেকে দেইখা কোটেশন তুইলা…এখন প্রেমপত্রও লেখা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মেসেজ। প্রেমপত্র লেখাও যে একটা সাহিত্য সেটাও উপস্থিত সবাইকে জানাতে ভোলেননি রাষ্ট্রপতি। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী