অনুমোদনের অপেক্ষায় নৌ রুট জরিপ মহাপরিকল্পনা
তরিকুল ইসলাম সুমন: দেশে সকল নদ-নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এজন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ মোট ৪০০টি নদী, ৬ হাজার ৫৩৬টি খাল এবং ১৮ হাজার ৪০৩টি পুকুর খনন করা হবে। মহাপরিকল্পনার খসড়া প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা। এসব নদীর প্রবাহ ফেরাতে নেওয়া হয়েছে মহাপরিকল্পপনা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহণমন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ১৯৬২-৬৭ পর্যন্ত নেডকোর সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে নদীপথের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে নাব্য নৌ-পথের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ১৩ হাজার ৭৭০ কিলোমিটার। ১৯৮৭-৮৮ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী বর্ষাকালে বাংলাদেশে নদীপথের দৈর্ঘ্য মাত্র ৬০০০ কিলোমিটার এবং শুষ্ক মৌসুমে ৩৮২৪ কিলোমিটার। ১৯৮৭-৮৮ সনে ডাচ ডি.এইচ.ভি. কর্তৃক শ্রেণিবদ্ধ নৌ-পথ জরিপের পর প্রায় ২৯ বছর পার হলেও প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে নৌ-পথের জরিপ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক বলেন, এখন আমাদের কাছে নব্য নৌ রুটের সঠিক তথ্য না থাকলেও জরিপ কাজ থেমে নেই। আমাদের হাইড্রোগ্রাফিক বিভাগ এ কাজ করছে। আমরা যেসব নদী ড্রেজিং করি সেটা আগে ওপরে জরিপ করা হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সকল নৌ রুট জরিপের জন্য একটি প্রস্তাবনা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করবে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সকল নৌ রুট জরিপ শেষ করবে। দেশের ৩৪টি নৌ রুট জরিপের কাজ চলছে। পাশপাশি ড্রেজিং কাজ। সম্প্রতি সাড়ে ৯শ কিলোমিটার নৌপথ (ঢাকা-চট্টগ্রাম-আশুগঞ্জ-রুপপুর) রুটের ড্রেজিংকরার অনমোদন পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আশা করছি অচিরেই নদ-নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার মহাপরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেবেন।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ২১টি ড্রেজার রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ড্রেজার ডকিংয়ে রয়েছে। বাকি ১৯টি দিয়ে কাজ চলছে। এছাড়াও নতুন করে আরও ১০টি ড্রেজার সংগ্রহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আরও ১০টি ড্রেজার সংগ্রহের কার্যাদেশ পাইপলাইনে রয়েছে। প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করছে ৪০টি ড্রেজার।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) প্রায় ৫০টি ড্রেজার রয়েছে, নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পলি অপসারণের জন্য বিভিন্ন ক্ষমতার আরও ৩০টি ড্রেজার ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৪০০টি নদীর মাধ্যমে প্রতিবছর ১ দশমিক ২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) ঘনমিটার পলি প্রবাহিত হয়। এর বড় অংশই নদীর তলদেশে জমে নাব্য সংকট সৃষ্টি করছে। মহাপরিকল্পনার আওতায় তিন প্রধান নদী যমুনা, পদ্মা ও মেঘনাসহ মোট ৪০০টি নদী, ৬ হাজার ৫৩৬টি খাল এবং ১৮ হাজার ৪০৩টি পুকুর খনন করা হবে। পদ্মা মেঘনা যমুনা নদী খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ কোটি টাকা। বাকি নদী, খাল ও পুকুর খননে ধরা হয়েছে ৬ লাখ কোটি টাকা। সম্পাদনা: এনামুল হক