সিলেটে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, কমছে পর্যটক
আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট : সিলেটের জাফলং, শাহ আরেফিন টিলা কিংবা বিছানাকান্দি- অপার সৌন্দর্যের এসব স্থান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেই সমধিক পরিচিত। এসব স্থানের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দয্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। একসময় সারা বছরই লেগে থাকতো পর্যটকদের স্রোত। কিন্তু সেই স্রোত আর নেই। পাথরের লোভে প্রকৃতি কন্যাকে ধ্বংস করায় শ্রীহীন হয়ে পড়ছে অমিত সম্ভাবনার এসব পর্যটন কেন্দ্র। ফলে ক্রমেই কমছে পর্যটকের স্রোত। আর অপরিকল্পিতভাবে, ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের ফলে ক্রমাগত ঘটছে প্রাণহানি। সাম্প্রতিক সময়ে এক মাসে এসব স্থানে পাথর উত্তোলনকালে মৃত্যু হয়েছে নয় শ্রমিকের। এরকম অবস্থায় পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনে ব্যবস্থা নিতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকৃতি কন্যা হিসেবে পরিচিত গোটা সিলেট। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এ জনপদের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে রূপ-লাবণ্যের অনন্য এক রূপ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের কারণে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও স্বনামে পরিচিত সিলেট। দেশের পর্যটন শিল্পে সিলেটের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। পর্যটনকে কেন্দ্র করে তাই সিলেটকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু ঠিক এরকম সময়ে পর্যটনের বিকাশ তো দূরের কথা, অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন করে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে সিলেটের অমিত সম্ভাবনাকে।
দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে পরিবেশ ধ্বংস করে অপরিকল্পিতভাবে চলছে পাথর উত্তোলন। পাথরখেকোদের থাবায় হারিয়ে যাচ্ছে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা। দেখা দিচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়। গভীর গর্ত করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ঘটছে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা। প্রশাসনের অভিযান, মামলা- কোনটাই যেন ঠেকাতে পারছে না দানবীয় এ কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাথর উত্তোলনের সাথে হাজার হাজার শ্রমিকদের জীবিকা জড়িত। তাছাড়া সিলেটের পাথর দেশের সিংহভাগ পাথরের চাহিদা পূরণ করে। এজন্য পাথর উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশ কিংবা প্রকৃতিকে ধ্বংস করে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে শ্রীহীন করে দিয়ে পাথর উত্তোলনের যৌক্তিকতা নেই। পাথর উত্তোলনের ফলে প্রকৃতি-পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, পরিকল্পিতভাবে যাতে পাথর উত্তোলন করা হয়- সে উদ্যোগই নেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ইরফানুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর উত্তোলন করে কাজে লাগানো যেমন প্রয়োজন, তেমনি জীববৈচিত্র, প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এজন্য পাথর উত্তোলনে সুপরিকল্পিত ও নিরাপদ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় সিলেটের পর্যটনের যে অমিত সম্ভাবনা, তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
পরিবেশ অধিদফতর, সিলেটের পরিচালক সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ধ্বংস ঠেকাতে জাফলং, আরেফিন টিলা প্রভৃতিতে স্থানে বিভিন্ন সময়ই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তবু পাথরখেকোদের থামানো সম্ভব হচ্ছে না।
পর্যটনপ্রেমী সিলেটের সচেতন মানুষের দাবি, পাথর উত্তোলনের ফলে যাতে পর্যটন সম্ভাবনা ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত নীতিমালা। আর শিগগিরই এমন একটি নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের উদ্যোগী হওয়া জরুরি । সম্পাদনা : মুরাদ হাসান