৭ বছরে ৪৮টি অভিযোগের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তে আরও একশ বছর লাগবে!
এস এম নূর মোহাম্মদ: মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই থেকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪৮টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কাজ শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। আর বর্তমানে তদন্ত কাজ চলছে ২৭টি অভিযোগের বিষয়ে।
ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর সারাদেশ থেকেই অভিযোগ জমা হতে থাকে তদন্ত সংস্থায়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, তদন্ত সংস্থায় আসা ৬৯১টি অভিযোগের মধ্যে ৪৮টির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও তদন্ত চলাকালে আসামি মারা যাওয়ায় ৫টি অভিযোগ ফেরত দিয়েছে সংস্থাটি। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের এই সংস্থায় তদন্তের অপক্ষোয় রয়েছে ৬৩৮টি অভিযোগে। যাতে আসামির সংখ্যা ৩ হাজার ৩’শ ৩৪ জন। গত সাত বছরে তদন্তের গতির হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে জমে থাকা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে আরও ৯১ বছর সময় লাগবে তদন্ত সংস্থার। আর নতুন করে আরও অভিযোগ আসলে চলমান কাঠামোতে সব শেষ করতে ১০০ বছর লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে প্রায় অর্ধ শতাব্দি আগের ঘটনায় মামলার বাদী আসামি এবং সাক্ষীরাও অনেকে মৃত্যু পথযাত্রী। তাই দ্রুত এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি না করলে অনেকেই বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাই যত দ্রুত সম্ভব এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করে অভিযুক্ত আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।
২০১০ সালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলেও কিভাবে তা শেষ হবে তার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে। এটি কতদিন চলবে, কিভাবে এর পরিসমাপ্তি ঘটানো হবে, আর কত সময় পর্যন্ত অভিযোগ গ্রহণ করা হবে তারও সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেননি সংশ্লিষ্টরা। তাই এখনই সব কিছুর পরিকল্পনা করে সামনে আগানো উচিত বলে মনে করেন অনেকে। কেননা ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে ট্রাইব্যুনালের অবস্থা কি হবে তাও জানা নেই অনেকের কাছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে মামলার সংখ্যা বিচারে ২০১২ সালে ট্রাইব্যুনাল-২ এর কার্যক্রম শুরু হয়। তবে পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একটি ট্রাইব্যুনাল নিষ্ক্রীয় করে সরকার। যার কারণে এখন একটি ট্রাইব্যুনালেই চলছে বিচার কাজ।
দুই ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ২৭ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির পর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ছয় আসামির। যাদের মধ্যে পাঁচজনই জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের। আর একজন বিএনপির। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ চলছে ২৩টি মামলার।
এদিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান এ প্রতিবেদককে বলেন, এর মধ্যে যাচাই-বাছাই হবে। হয়তো সব ঠিক থাকবে না। এখানে সময় সীমার কিছু নেই। আমাদের যত লোকবল আছে তা দিয়ে যতদিন লাগে, আর সরকার যতদিন চায় এটা চলতে থাকবে।
তিনি বলেন, অভিযোগকারীরাতো বিচার চায়। আমার মনে হয়, একটি ট্রাইব্যুনাল দিয়ে দ্রুত বিচার শেষ করা যাবে না। ট্রাইব্যুনাল দুটোই ছিল। এখন একটি স্থগিত রয়েছে। তবে যেটি নিষ্ক্রীয় রয়েছে সেটা সচল করলে আরও দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি হতো। আর ট্রাইব্যুনাল বাড়িয়ে আট বিভাগে আটটি করলে আরও ভালো হয়। ট্রাইব্যুনাল বাড়ানো হলে তখন তদন্ত সংস্থাসহ অন্যান্য জায়গাতেও লোকবল বাড়ানো হতে পারে।
এছাড়া জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, অবশ্যই ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। যাতে দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়। সরকার নিশ্চয় এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে। কেননা এছাড়া কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল বাড়ানো হলে প্রয়োজনে তদন্ত সংস্থার লোকবল যেকোনো সময়ই বাড়ানো যেতে পারে। আর সে অবস্থা তাদের রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বাড়ানো হলে আগে যেভাবে চলছিল সেভাবে চলবে। দ্রুত কাজ এগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আশাকরি সবকিছু সহজভাবে এগিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের রয়েছে। আর অভিজ্ঞতাও আমাদের অনেক বেড়েছে।