ইউনূসের প্রশংসা ও পরিবহন ধর্মঘট অর্থমন্ত্রী ও নৌমন্ত্রীর উপর ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটে পুরো দেশ অচল করে দেওয়ার জন্য নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং ড. ইউনূসের প্রশংসার জন্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপর ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব। এক সপ্তাহের মধ্যে এই দুই মন্ত্রীর দুই ধরনের ঘটনায় অসন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং সিনিয়র মন্ত্রীরা প্রকাশ্যেই শাজাহান খানের সমালোচনা করেছেন।
এদিকে ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য বিমোচনে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রসংশা করায় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরাই শুধু নয়-প্রধানমন্ত্রী নিজেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার দলের একটি অনুষ্ঠানে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে ইউনূস দেশকে এবং আমার পরিবারকে শেষ করে দিতে চেয়েছেন। আর এই ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে ওই ব্যক্তি দেশের মানুষকে যে শোষণ করেছেন তার হিসেবও আমাদের কাছে রয়েছে। তারপরও কেন অর্থমন্ত্রী তার প্রশংসা করলেন?
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ড. ইউনূসের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর একটি সিন্ডিকেট সম্পর্ক রয়েছে। এটা কম বেশি সবাই জানেন। অর্থমন্ত্রীর বয়স হয়েছে তো তাই সত্যিটা বেরিয়ে এসেছে।
আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিম-লীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একমাসও হয়নি পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বোঝা নেমেছে। আর এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যে ড. ইউনূস গং জড়িত তা সবাই জানে। আর এই ক্ষুদ্র ঋণের নেতিবাচক কথা আমরা সবাই জানি। মুহিত সাহেব ইউনূসের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীকে এক প্রকার ইরিটেড করেছেন। আমি মনে করি, ড. ইউনূসের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রীর এই স্বীকৃতি সামগ্রিকভাবে সরকারের বিপক্ষে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছেন, পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেই সময় বেশ চিন্তিত ছিলেন। দলের ভেতর থেকেই শাজাহান খানের সম্পৃক্ততার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে দ্রুত এবং কার্যকর তদন্তের জন্য বলেছেন।
জানা গেছে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সেতু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ১৪ দলীয় জোটের নেতারা ওই প্রেক্ষাপটের জন্য নৌমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির একজন সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙার দিকে অভিযোগের ইঙ্গিত দেন। আওয়ামী লীগ নেতারা শাজাহান খানের বিচার চান। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছেন, নৌমন্ত্রী নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। তার এই ক্ষমতা প্রদর্শনের কারণে সরকারের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো। দলের ভেতরে থেকে যারা এ রকম ক্ষতি করতে চান-তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।
একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতারা অর্থমন্ত্রীর বিগত সময়ের কর্মকা-ের সমালোচনা করে বলেন, তিনি যে আমাদের লোক নন, ইউনূস সিন্ডিকেটের মানুষ তা এবারও প্রমাণিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী প্রকাশ্যে ইউনূসকে একটি ভুল বিষয়ে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এই দুই মন্ত্রীর দুটি ভিন্ন ঘটনা আওয়ামী লীগের জন্য ইমেজ ক্ষুণেœর মতো কাজ করেছে। সরকার যদি কৌশলে এই শ্রমিক ধর্মঘটের অবসান না ঘটাতে পারতো তাহলে খুব বেকায়দায় পড়তো। আর অর্থমন্ত্রী একেবারে প্রধানমন্ত্রী আবেগে আঘাত করেছেন। যিনি এই দেশের শত্রু তার পক্ষে সাফাই গেয়ে মাল মুহিত প্রধানমন্ত্রীকে আঘাত করেছেন। তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
হঠাৎ করেই বিতর্কে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস। পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে গত মাসের শুরুতে এই দুর্নীতির অভিযোগের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে ব্যাপক সমালোচিত হন ড. ইউনূস। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই অর্থমন্ত্রী ড. আবুল মাল আবদুল মুহিতের ক্ষুদ্র ঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে ড. ইউনূসের প্রশংসাসূচক বক্তব্যের জের ধরে আবারো আলোচনায় আসেন বহুল বিতর্কিত ড. ইউনূস, হন সমালোচিত। সেই সঙ্গে সরকারের তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রীও। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করায় সরকারের ভেতর ও বাইরে ব্যাপক বিষোদগারে পড়েছেন নানা বক্তব্যের কারণেই বিতর্কিত এই অর্থমন্ত্রীও।
এদিকে গত ২৭ তারিখে মিশুক মুনির ও তারেক মাসুদের দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে গাড়ি চালকের যাবজ্জীবন এবং তার দুদিন পর আরেক ট্রাক চালকের দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যুদ-ের কারণে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের পুরো দেশ অচল হয়ে পড়ে। সরকারের মন্ত্রী এমপি ও বিভিন্ন মহল মনে করছে-এই ঘটনার সঙ্গে শাজাহান খান সম্পৃক্ত।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ড. ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে প্রশংসা করার কোনো সুযোগ নেই বরং এটা নিয়ে নিন্দা আসতে পারে। এ দেশের দারিদ্র্য বিমোচন করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।