কারখানা স্থানান্তরের মুহূর্ত পরিবেশবাদীদের এই চাপ ব্যবসায়ীদের জন্য হুমকি দ্রুত নতুন গ্যাস সংযোগ ও প্লট বরাদ্দ চান মালিকরা
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে আপিলের সিদ্ধান্ত
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: চামড়া শিল্প মালিকরা বলেছেন, চামড়া শিল্প কারখানা স্থানান্তরে বড় সমস্যা নতুন গ্যাস সংযোগ। সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া মালিকদের জন্য যে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে সেটি এখনো কাজের জন্য উপযোগী হয়নি। এখনো মালিকদের প্লট বরাদ্দ সম্পূর্ণ করা হয়নি এবং রেজিস্ট্রেশন শেষ হয়নি। এছাড়া যেসব মালিক ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি কিনেছেন, সেসব যন্ত্রপাতি স্থানান্তরের ব্যাপারে ব্যাংক অনুমোদন মিলছে না।
হাজারীবাগ থেকে সাভারে সরিয়ে না নেওয়া ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধ এবং কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ সম্পর্কে চামড়া শিল্প মালিকরা আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, তারা এই আদেশের বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করবেন। চামড়া শিল্প মালিকরা বলেন, আমরা তো চলেই গেছি। ১৫৪টি কারখানার মধ্যে ৪৪টি চলে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে আরও ৫০টি প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিয়েছে। আবার ১৫৪টি কারখানার মধ্যে সবগুলোই সমান চালু নয়। অনেকগুলো বন্ধ রয়েছে। হেমায়েতপুর চালু করবে। বিসিক বা সরকার যাই বলি, তারা সমস্যা বোঝে। কারণ সরকারের সঙ্গে চামড়া শিল্প মালিকদের অনেক বৈঠক হয়েছে। নতুন গ্যাস সংযোগ না হলে উৎপাদন বন্ধ থাকবে এবং দেশের রপ্তানি বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। আর ব্যবসায়ীরা এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেবে তা জানে না।
বাংলাদেশ টেনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, হাইকোর্টের আদেশের প্রতি আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। এই আদেশ আমাদের কাছে শিরোধার্য। তবে যখন কারখানার মালিকরা ট্যানারি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে এবং এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান চলেও গিয়েছে, বাকিগুলোও যাবে। সেই মুহুর্তে তাড়াহুড়ো করে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি বন্ধ করে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির দিকে নেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে বলে মনে করি। তিনি বলেন, আমরা সরকারের দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত নতুন গ্যাস সংযোগ এবং হেমায়েরতপুরকে কারখানা চলার উপযোগী করুন। ট্যানারি স্থানান্তরের সময়ে পরিবেশবাদীদের বিষয়টি নিয়ে চাপ দেওয়াকে অতি উৎসাহী কর্মকা- বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ টেনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাকাওয়াত উল্লাহ বলেছেন, চামড়া শিল্পের কারখানাগুলো স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান চলে গিয়েছে। আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যে আরও ৫০টি কারখানা চলে যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের জুন/জুলাইয়ের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর হয়ে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকার সময়ও দিয়েছে। কিন্তু কিছু উৎসাহী ব্যক্তি এ পর্যায়ে নিজেদের কৃতিত্ব ফলাতে উঠেপড়ে লেগেছে। সাকাওয়াত উল্লাহ বলেন, ট্যানারি সরিয়ে নিতে এই শিল্পের মালিকদের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। তাই আমাদের এভাবে চাপ দিয়ে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলা উচিত নয়। আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করব। তিনি বলেন, গত এক মাস থেকে এখানে হাজারীবাগে কাঁচামাল প্রবেশ করছে না। ফলে দূষণের পরিমাণ একেবারে নেই বললেই চলে। এটা পরিবেশবাদীদের জানা উচিত। এখন কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় রয়েছে, যেমন কোনো কোনো মালিকের ব্যাংক ঋণ রয়েছে। তাছাড়া সাভারের হেমায়েতপুর চামড়া শিল্প মালিকদের জন্য যে জায়গা দেওয়া হয়েছে, তা এখনো রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি।
বাংলাদেশ টেনার্স এসোসিয়েশনের কার্য নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে পরিবেশবাদীদের এই চাপ যৌক্তিক নয়। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানে, কেন কারখানা স্থানান্তর করা হচ্ছে না। তাছাড়া আমরা এ পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি টাকা হেমায়েতপুর বিনিয়োগ করেছি। সরকার আড়াই’শ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। আমরা যে কারখানা স্থানান্তর করব এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ করে তো আমরা রাস্তায় বসে যেতে পারব না।
সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে ২০১১ সালে ৩০ এপ্রিলের পর হাজারীবাগে ট্যানারি চালানোর অনুমোদন নেই। এরপরও সরকার চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেন। এ সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নেয়নি। এ কারণে জানুয়ারিতে আদালতে আবেদন করেছে পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবী সংগঠন (বেলা)। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত হাজারীবাগ থেকে সাভারে সরিয়ে না নেওয়া ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধ এবং কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দিয়েছেন। সম্পাদনা: রাশিদ