প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন হতে হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনেই
রুহিন হোসেন প্রিন্স
নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছেÑ যে সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেই সরকারের ভূমিকাটা কেমন হবে বা হওয়া উচিত। আমার মতে, সেই সরকারের অন্যতম ভূমিকা হতে হবে, তারা কতগুলো রুটিন কাজ করবে। পুলিশ, প্রশাসনসহ সব চলে যাবে নির্বাচন কমিশনারের অধীনে। নির্বাচকালীন সরকারের অধীনে থাকবে না তা। নির্বাচনকালীন সরকার শুধু বিশেষ ওই তিনমাস রুটিন কতগুলো কাজ করবে। কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
এটা যদি আমরা ঠিক করতে পারি এবং পুরো ক্ষমতা যদি নির্বাচন কমিশনকে দিতে পারি এবং নির্বাচন কমিশন যদি ক্ষমতার ফুল প্র্যাক্টিস করে তাহলে ওই সরকারের কোনো মুখ্য ভূমিকা থাকবে না। নির্বাচনকালীন সরকারের যদি কোনো মুখ্য ভূমিকা না থাকে, নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে তার কর্মকা- পরিচালনা করতে পারে তাহলে সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে যে আধিপত্য বিস্তার করে এবং আধিপত্য বিস্তার করার মধ্যদিয়ে সেই নির্বাচন যে প্রশাসনিক কারসাজি করার অভিযোগ উঠে থাকে, সেই সুযোগ সরকার পাবে না। এমন অভিযোগও উঠবে না। কারসাজি করার সুযোগ না পেলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আমাদের রাজনৈতিক দলগগুলোর মধ্যে এই যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, একে অপরের প্রতি হিংসা প্রদর্শন, জনগণের জানমাল পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো লক্ষ্য করা যায়। কেন হচ্ছে এমনটি? কারণ তাদের কাছে রাজনৈতিক আদর্শটা প্রধান কথা নয়, জনগণের স্বার্থই প্রধান কথা নয়Ñ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, প্রধান কথা হচ্ছে যেকোনোভাবে নিজেদের জয়ী করতে হবে। জিততে হবে। যেকোনোভাবে জয়লাভ করতে হলে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হবে। এ কারণেই নিজেদের সুবিধামতো সরকারের কথাই তারা বলে। সুতরাং আমি মনে করি, এখানে সমাধান একটাইÑ গণজাগরণ। জনগণকে জাগতে হবে। এখানে আমরা আমাদের কণ্ঠকে যদি আরও সোচ্চার করতে পারতাম এবং নির্বাচনকালীন সময়ের সরকার সে রুটিন কাজ ছাড়া আর কিছু করবে না এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারতাম তাহলে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আবহ তৈরি করা যেত। যদি ঐক্যবদ্ধভাবে এ কাজে নামতে পারি কেবলমাত্র তখনই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যাবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিশ্চয়ই জনগণকে নিয়ে এমন একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব বলে আশা করছি। দেশবাসী যেন একটা ভালো নির্বাচনী পরিবেশ পায় সেটা নিশ্চিতে আমাদের লড়াই চলবে।
নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে বা এই সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে? এমন প্রশ্ন উঠছে এখন। আজকে একদল বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে, আর অন্যপক্ষ বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে আমরা নির্বাচন করব না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন হতে হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনেই। এবং নির্বাচনকালীন সময় যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তার প্রধান দায়িত্ব হবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। এটা যদি করা সম্ভব হয় তাহলে আমরা একটা অর্থবহ নির্বাচনের দিকে হাঁটতে পারব।
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিপিবি
মতাতম গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান