আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে শিক্ষাবিদ ও ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম একজন নারীকে পুরুষের তুলনায় তিনগুণ বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে হয়
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উম্মুল ওয়ারা সুইটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রথম নারী ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেছেন, দেশের সব ক্ষেত্রে নারী পুরুষের ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার পূর্ণতা এলেই দেশের উন্নতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। মুখে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও কার্যত এখনো নারীদের জন্য পথটা কন্টকাকীর্ণ। একজন নারীকে পুরুষের তুলনায় তিনগুন বেশি যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সামনে আসতে হয়। এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মাহফুজা খানম আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্জনের সঙ্গে নারীর ইতিহাস উজ্জ্বলভাবে জড়িত। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ সবক্ষেত্রে নারী অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু নারীর যেন পরীক্ষা দেওয়া আর শেষ হয় না।
উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালের পহেলা বৈশাখ কলকাতায জন্ম নেন মাহফুহজা খানম। ১৯৬৬/৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) ছিলেন তিনি। ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসির অংশ নিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ছাত্র আন্দোলনের ইতিসহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, প্রতিটি আন্দোলনে সংগ্রামে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মাহফুজা খানম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে যে ভূমিকা রাখছেন সেটি প্রশংসার দাবি রাখে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে নারীদের নিজেদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে। আর এরজন্য প্রয়োজন নারীর সুশিক্ষা ও সচেতনতা। তবে প্রধানমন্ত্রী যতটা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আগ্রহী অন্যদেরও বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, একদিকে নারী এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে নারী এখন অনেক বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হলো, বিচারহীনতা। এসব সহিংসা বন্ধ করতে না পারলে নারীর অগ্রগতিই নয়, সব অগ্রগতির চাকাই থেমে যাবে। নারী মা, এটা আমরা কেন ভুলে যাই। নারীকে অধিকার না দিলে পরবর্তী প্রজন্ম অবক্ষয়ের দিকে যাবে। তাই নারীর প্রতি সব ধরণের সহিংসতা কমিয়ে আনতে হবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এই শিশু সংগঠক ও মানবাধিকা নেত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানকে খাটো করে দেখা হয়েছে। এখন একটু একটু করে বীরাঙ্গনা নারীদের সম্মান দেওয়া হচ্ছে। তবে তা হলো বীরাঙ্গনা হিসেবে। আমরা চাই নারীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান দেওয়া হোক। একজন যোদ্ধার পরিচয় কি? এদেশের প্রতিটি নারী মুক্তিযুদ্ধে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। সরাসরি নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়েছে। তারপরও নারীর জন্য মুক্তিযোদ্ধা নাম দিতে এখনো সবার কষ্ট হয়।
মাহফুজা খানম ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থসংগ্রহ করেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইডেন কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। চাকরি জীবন শেষ করেছেন অধ্যক্ষ হিসেবে৷ বর্তমানে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন এর প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট, খেলাঘরের চেয়ারপারসন, অপরাজেয় বাংলাদেশের সভাপতি, পেশাজীবী নারী সমাজের সভাপতি, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য।
সম্পাদনা: আশিক রহমান