যারা যুদ্ধ করেনি তারা স্বীকৃতি পেলে মুক্তিযোদ্ধারা কষ্ট পায়
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তাদের নাম দেখলে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিমান হওয়ারই কথা। যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে রণাঙ্গনে ছুটে গিয়েছেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য। যারা শতভাগ জানতেন- আর ফিরে নাও আসতে পারেন। তাদের পাশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কখনো মেনে নেওয়ার মতো নয়।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. হাসান মাহমুদ বলেন, যারা সেদিন দেশ স্বাধীন করতে ঘর ছেড়েছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অস্ত্রের মুখে নিজের বুক চিতিয়ে দিয়েছেন তাদের সেদিন সম্মানী বা সার্টিফিকের্টের মায়া ছিল না। তারা জানতেন না মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পর তাদের জন্য সম্মানী দেওয়া হবে। তারা শুধু দেশকে ভালবেসে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের তালিকা করতে খুব সতর্ক হয়ে করতে হবে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবজ্ঞা করা ছাড়া আর কিছু নয়। ভালো করে তথ্য প্রমাণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা উচিত।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধ না করেও যারা আর্থিক সুবিধার জন্য মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চান, এমন ব্যক্তি ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এমনকি তাকে তালিকাভুক্তিতে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, এখন সুযোগ সুবিধা বাড়ানোতে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ না করেও নানা ধরনের তথ্য উপাত্ত নিয়ে আসছেন। আবার কেউ কেউ এটা নিয়ে আর্থিক দুর্নীতি করছে। কিন্তু এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে কঠোর হতে হবে। এই মুক্তিযোদ্ধার তালিকার সঙ্গে এদেশের অহংকার গর্ব যুক্ত। এখানে কোনো দূষণ তৈরি করা যাবে না। এটা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসম্মান ছাড়া আর কিছু নয়।
মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, আমরা কিছু পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এটা ঠিক অনেকেই যুদ্ধের পর সার্টিফিকের্ট সংগ্রহ করেননি। তাছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর তো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অভিমানে অপমানে একধরনের নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। কেউ সার্টিফিকেট নিয়ে ভাবেননি। এখন হয়তো তারা ভাবছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে তারা সার্টিফিকেট নিতে চান। তাদের জন্য এটা গর্বের এবং অহংকারের। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ করেনি, এমন কেউ যখন এই কার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তখন অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে ব্যথা লাগে। এটা হতে দেওয়া যাবে না।