রাজউককে উকিল নোটিশ আদালতের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে বিজিএমইএর নেতারা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার ব্যাপারে আদালত সময় দিবে কিনা এই ব্যাপারে এখনও কিছুই বুঝতে পারছেন না বিজিএমইএ এর নেতারা। তারা গভীর উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। কি আদেশ আসবে সেই রোববার আদালত থেকে। তবে তারা সময় পেতে পারেন এমন ধারণা করেই এখনও অপেক্ষা করছেন। এই কারণে তাদের মধ্যে ভবন ছেড়ে দেওয়ার কোনো তাড়াহুড়া নেই। যদিও সরকার তাদেরকে একটি জমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সেই হিসাবে তারা একটি জমিও পেতে যাচ্ছে। এখন তারা জমি পাওয়ার পর ভবন তৈরি করে স্থানান্তরিত হতে চাইছেন।
তবে অনেকেই মনে করছেন, বিজিএমইএ চাইলে নতুন কোনো ভবন ভাড়া করেও আপাতত অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে পারে। এদিকে এই অবস্থায় সাতদিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার ব্যাপারে নোটিশ জারি করার জন্য ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনি নোটিশ দিয়েছেন আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। তিনি বৃহস্পতিবার রাজউকের চেয়ারম্যানের বরাবর এই নোটিশ দেন। এবং তিনি ব্যবস্থা না নিয়ে তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে বলেও নোটিশে জানিয়েছেন। এই অবস্থায় রাজউক কি ব্যবস্থা নেয় তাও তারা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
সূত্র জানায়, বিজিইএমএ ভবন মালিকদের পক্ষে সরকার স্পষ্ট করে কোনো অবস্থান নিতে পারছে না এবং তাদের সময় দেয়ার প্রয়োজন কি নেই সেই ব্যাপারেও কোনো কথা বলছে না। কারণ সরকার আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে। আদালত যেই সিদ্ধান্ত দিবে সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে। তবে আদালতের সিদ্ধান্ত যদি সময় না দেওয়ারও হয় এনিয়ে যাতে বিজিএমইএ কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করতে না পারেন এবং শ্রমিকদের উস্কে দিতে না পারেন সেই জন্য সতর্ক রয়েছে।
আর এই কারণে সরকার আগামই তাদেরকে জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিজিএমইএ যদি মনে করে ভবন সরানোর জন্য সময় না পেলে পোশাক শিল্পে এর প্রভাব পড়বে কিংবা শ্রমিকরা মাঠে নেমে আসবে সেই ধরনের কোনো কিছু তাদের করা উচিত হবে না। কারণ আদালতের প্রতি সবাইকে আস্থা রাখতে হবে। শ্রদ্ধা রাখতে হবে। আদালত যেই আদেশ দিবে সেই আদেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এখন আইনি ব্যবস্থার তারা শেষ পর্যায়ে এসেছে। নতুন করে তারা কোনো জটিলতা তৈরি না করলেই ভাল হবে।
এর আগে আদালত গাড়ি চালকের কারদ- ও মৃত্যুদ- দেওয়ার পর তারা পরিবহন ধর্মঘট করে। সেটা ছিল অন্যায়। কারণ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে ধর্মঘট করা যায় না। এই কারণে বিজিএমএই এর ভবনের ব্যাপারে আদালত যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটা তাদেরকে মানতে হবে।
সূত্র জানায়, আদালত কোনো কারণে সময় না দিলেও যাতে কেউ শ্রমিকদের মধ্যে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার অবতাড়না করতে না পারে সেই জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিবে।
সূত্র জানায়, আগামী রোববার আদালতে বিজিএমইএ এর সময় চেয়ে আবেদনের উপর শুনানি হবে। ওইদিন আদালত আদেশ দিতে পারে।
এদিকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ এনে রাজউক চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি নোটিশে সাত দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙ্গার উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তা না নিলে সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও বলেছেন। তিনি রাজউককে নোটিশে বলেছেন, বিজিএমইএ ভবন ভেঙ্গে ফেলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ হয়েছে ২০১৬ সালের ২ জুন। সেখানে বলা হয়, রায় পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ভবন ভাঙ্গবে। না ভাঙ্গলে রাজউক পদক্ষেপ নেবে। ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হয়েছে। তা শেষ হলেও ভবন ভাঙ্গার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষই পদক্ষেপ নেয়নি। আর তা নেওয়াটা আদালতের রায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অমান্য করার সামিল।
এদিকে ওই নোটিশ পাওয়ার পর রাজউক কি করবে সেই জন্য বিইজএমইএর নেতারা অপেক্ষা করছেন। এর আগে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিল তারা। সেটি খারিজ হয়ে গেছে। ওই আবেদন খারিজ হওয়ার পর তারা ভবনটি ভাঙ্গার জন্য তিন বছর সময় চেয়েছে।
বিজিএমইএর আবেদনের ওপর শুনানি রোববার শুনানি হবে। বৃহস্পতিবার আদালতে ভবন ভাঙ্গার আদেশ বহাল থাকে। সেখানে কত দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙ্গতে হবে এই ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। বিজিএমইএ সময় চাইলে তা লিখিতভাবে জানানোর জন্য সময় দিলে বুধবার তিন বছর সময় চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর এর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন মনজিল মোরসেদ।
আপিল বিভাগ যেদিন রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সেদিন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, নতুন একটি ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত হাতিরঝিলে তাদের ভবনটি না ভাঙ্গার আবেদন নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন। যদিও বিজিএমইএ এর তরফ থেকে নতুন করে কোনো উদ্যোগ শুরু করেনি। কোথায় হবে এই ভবন-তাও জানা নেই তাদের।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিজিএমইএকে উত্তরায় জমি দেওয়া হবে। বিজিএমইএ এর ভবনে তাদের অফিস না থাকলে কাজ করতে সমস্যা হবে বলেও তিনি মনে করেন না।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর কার্যালয় ভবন তৈরি করা হয়। রাজউকের অনুমতি ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয় বলে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আইনজীবী ডিএইচএম মুনিরউদ্দিন আদালতের নজরে আনলে আদালত রুল জারি করে। মালিকানা না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ প্রমাণের পর হাইকোর্ট ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার আদেশ দেয়। ২০১৩ সালে ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করে। আপিলেও তারা পরাজিত হয়।