দর্শনার্থী কমে যাচ্ছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের
সৈয়দ রশিদ আলম
০৯.০৩.২০১৭, সকাল ৮:৩০ মিনিট। স্থান: মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন। যদিও এটি দেশের প্রথম জাতীয় উদ্যান কিন্তু তারপরও দেশবাসীর কাছে তা মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন হিসেবে পরিচিত। দেশ স্বাধীনের আগে থেকে ঢাকা শহরের মধ্যে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন গড়ে তোলা হয়। এখানে গেলে প্রকৃতির সান্নিধ্য যেমন খুঁজে পাবেন সেই সঙ্গে খুঁজে পাবেন নির্জনতা। যা ঢাকা শহরের বাসিন্দারা তাদের বিনোদনের জন্য যেসব স্থানে ছুটে যান এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকার মিরপুরের গড়ে ওঠা বোটানিক্যাল গার্ডেন। একসময় দর্শনার্থীদের জন্য এখানে ক্যান্টিন তৈরি হয়েছিল, ছোট ছোট লেকে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা ছিল। যা আজ শুধুই ইতিহাস। ঢাকা শহর থেকে অথবা ঢাকার বাইরে থেকে কোনো দর্শনার্থী যখন বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ করবেন প্রথমই তিনি হতাশ হয়ে যাবেন। গিয়ে দেখবেন কয়েকমাসের পড়ে থাকা গাছের পাতা ও ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে। পরিষ্কার করার কেউ নেই অথচ এখানে একাধিক কর্মী রয়েছেন যাদের কাজ হচ্ছে বোটানিক্যাল গার্ডেনকে পরিচ্ছন্ন রাখা।
কিন্তু কোনো জবাবদিহিতা না থাকার কারণে সম্ভবত বোটানিক্যাল গার্ডেনের কর্মীরা অলসভাবে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। একজন মানুষ যখন সেখানে যাবেন নির্জনতার কারণে তিনি সম্ভবত ভয় পেয়ে যাবেন, কারণ নিরাপত্তা দেওয়ার মতোন কাউকেই খুঁজে পাবেন না। এখানে একটি দর্শনার্থী কেন্দ্র রয়েছে। গিয়ে দেখবেন তালা মারা। কবে এই তালা খুলবে কেউ-ই জানেন না। বন বিভাগের আওতাধীন এই বোটানিক্যাল গার্ডেনকে একটি আন্তর্জাতিক মানের গার্ডেনে পরিণত করা সম্ভব। যদি দক্ষ কর্মী দ্বারা বোটানিক্যাল গার্ডেনকে সাজানো যায়। এখানে রয়েছে বনজ বৃক্ষ, ঔষুধি বৃক্ষ ও ফলজ বৃক্ষ, নাম না জানা ও নাম জানা কয়েকশত ফুলের গাছ। কিন্তু যতেœর অভাবে এই বৃক্ষগুলো এতিমের মতো পড়ে আছে। এখানকার দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অভিযোগের কথা আমরা জানতে পেরেছি। দর্শনার্থীদের অভিযোগ তারা যে জায়গায় বসে বিশ্রাম নিবেন সেই জায়গায় ময়লার কারণে তারা বিশ্রাম নিতে পারেন না। খাবার ও পানির চাহিদা মেটাতে পারেন না।
ভ্রাম্যমান খাবার বিক্রেতারা সেখানে বাজার দরের চেয়ে চারগুন বেশি মূল্য নিয়ে থাকেন। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য যদি যান গিয়ে দেখবেন কোনো গাইড নেই, যিনি বৃক্ষের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দিবেন। সারা পৃথিবীতে বোটানিক্যাল গার্ডেনকে যেভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সেভাবে যদি আমাদের জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেনকেও গড়ে তোলা হয় তাহলে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী যেমন বাড়বে তেমনি প্রকৃতি প্রেমীদের একটি মিলন মেলা হিসেবে জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন স্বীকৃতি পেয়ে যাবে। মাননীয় বনমন্ত্রী যদি মাঝে মাঝে সারপ্রাইজ ভিজিটে মিরপুর জাতীয় বোটাানিক্যাল গার্ডেন পরিদর্শন করেন তাহলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের কাজের প্রতি, দায়িত্বের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হবেন। অন্যথায় এই বোটানিক্যাল গার্ডেন দর্শনার্থী হারাতে থাকবে।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশেই রয়েছে মিরপুর চিড়িয়াখানা বা জাতীয় চিড়িয়াখানা। সেখানে যদি হাজার হাজার দর্শনার্থী হতে পারে তাহলে মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শনার্থী কমে যাবে কেন? একসময় এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে অসামাজিক কাজ হলেও এখন তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারীর কারণে তা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে মিরপুর জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শনার্থী কমে যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান