‘২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান’
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: এ বছর থেকেই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করবে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের এদিনে যারা পাকিস্তানি শাসকের নিমর্মতার শিকার হয়েছেন, সেইসব শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। সেদিন বাঙালির উপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার হয়েছে পৃথিবীর সব গণহত্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের জাতীয় গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার এই উদ্যোগ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বিশিষ্টজনরা আরও বলেন, বর্তমান সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তবে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পাবে।
উল্লেখ্য, গতকাল জাসদের সংসদ সদ্য শিরিন আখতার এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে ২৫ মার্চের গণহত্যার একটি সচিত্র প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করেন এবং নিজেও কাঁদেন এবং উপস্থিত সংসদ সদস্যদের প্রত্যেকেই এ সময় কাঁদলেন। আজ সংসদে এই প্রস্তাব পাস হতে পারে।
এদিকে সংসদের উদ্যোগের ঘোষণায় উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ ওয়ার ক্রাইম ফাইন্ডিং অ্যান্ড ফ্যাক্টস (ডব্লিউএফসিসি) সংগঠনসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সংগঠন ও মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলেছেন, ২৫ মার্চের কালোরাত্রির মতো এমন রাত্রি যেন আর কোনোদিন না আসে। তারা বলেন, এ বছর থেকেই যেন দিবসটি পালন করা হয়। সংসদে এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে অভিন্দন জানান।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, এটা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আমরা প্রতিবছর ২৫ মার্চের রাতে গণহত্যা দিবসের মশাল র্যালি করি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করছি। আরও কাজ করতে চাই। আমরা চাই এই সরকারই ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পেতে উদ্যোগ নেবে। এখনই সব তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করার সময়।
ডব্লিউএফসিসির সভাপতি ডা. হাসান মাহমুদ বলেন, এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস করার উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা সবাই আনন্দিত। সে রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেভাবে বাংলাদেশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার কথা বিশ্বাসী জানবে। সংসদের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি। এই দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। যেভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেল। একদিন ২৫ মার্চও আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পাবে। মুক্তিযোদ্ধা ও প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, কৃতজ্ঞতা বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার নেতৃত্বে সংসদ এই প্রস্তাব পাস করতে যাচ্ছে। আমরা চাই ২৫ মার্চ হোক আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথায় নেই ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল। এখনো সব তথ্য উপাত্ত রয়েছে। বিদেশি সাংবাদিকরা জীবিত রয়েছেন যারা ২৫ মার্চের কালোরাতের ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও মানবাধিকার নেতা ড. মাহফুজা খানম বলেন, এই সংসদকে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তিনি ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পেতে যা প্রয়োজন তাই করবেন। তিনি এই সংসদেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিল পাস করেছেন। যে হায়েনারা সেদিন আমাদের বোনদের সম্ভ্রম হানি করেছে, অকাতরে মানুষ হত্যা করেছে তারাই দেশের পতাকা নিয়ে ঘুরেছে। আজ মুক্তিযোদ্ধারা দেখে যেতে পারছেন, তাদের বিচার হয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা এই সরকারই পারবে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি এনে দিতে। সম্পাদনা: এনামুল হক