নৌবাহিনীর দুটি সাবমেরিনের কমিশনিং আজ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: চীন থেকে সংগ্রহকৃত দুটি সাবমেরিন আজ কমিশনিং লাভ করবে। কমিশন লাভ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কাজ শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর যাত্রা ও কাজ শুরু হচ্ছে আজ। এই উপলক্ষে নৌবাহিনীর তরফ থেকে চট্টগ্রামে নেভাল বার্থ, বানৌজা ঈসা খান-এ বেলা সাড়ে ১১টায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এর কমিশনিং ফরমান দিবেন। তিনি সেখানে বক্তৃতা করবেন এবং সাবমেরিন দুটি পরিদর্শন করবেন।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে নির্ধারিত হওয়ায় এখন সমুদ্রের নিরাপত্তা রক্ষা, নৌ ও সমুদ্র সম্পদ রক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য সরকার নৌবাহিনীকে অত্যাধুনিক বাহিনীতে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেই হিসেবে কাজও করছেন। ভিশন-২০৩০ও ঠিক করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আধুনিক জাহাজ ও সাবমেরিনও কেনা হচ্ছে। নৌবাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক জাহাজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এরই অংশ হিসেবে দুটি সাবমেরিন কেনা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর চীনের তরফ থেকে দুটি সাবমেরিন হস্তান্তর করা হয়। এর মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক নৌ শক্তি হিসেবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
গতবছর চীনের দালিয়ান প্রদেশের লিয়াওনান শিপইয়ার্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চীন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি-এর নিকট সাবমেরিন দুটি হস্তান্তর করেন রিয়ার এডমিরাল লিউ জিঝু।
ওই সময়ে চীনা এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উচ্চ পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সাবমেরিন দুটির নামকরণ করা হয়েছে বাংলায়। একটির নাম ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’।
ওই সময়ে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, চীন থেকে দুটি সাবমেরিন সংগ্রহের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক শক্তি হিসেবে যাত্রা শুরু করল। তিনি এই সাবমেরিন দুটির নতুনভাবে সজ্জিতকরণ এবং ক্রুদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য চীনা নৌবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার নৌবাহিনীকে আধুনিক, ত্রিমাত্রিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নৌবাহিনীর উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থলভাগের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে সরকার মনে করছে, সারা বিশ্বের নজর এখন সমুদ্র সম্পদের দিকে। বর্তমান সরকারও ব্লু ইকোনমির মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক কর্মকা- জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। এ বাণিজ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হলো সমুদ্রপথ। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে আজ বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের রয়েছে সুনির্দিষ্ট সামুদ্রিক এলাকা। দেশের এই বিশাল সমুদ্র এলাকায় বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও আছে মৎস্য, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ মূল্যবান সম্পদ। ভৌগোলিক অবস্থান ও কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের এই জলসীমা ও তার সম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীকেই ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশের সমুদ্র ১১৮, ৬৩১ স্কয়ার কিলোমিটার, একটি এলাকা তার ভূখ- থেকে প্রায় সমান ধরে দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য প্রস্তুতকৃত এই কনভেনশনাল সাবমেরিন দুটি ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন। প্রতিটি দৈর্ঘ্যে ৭৬ মিটার এবং প্রস্থে ৭ দশমিক ৬ মিটার। সাবমেরিনসমূহ টর্পেডো ও মাইন দ্বারা সু-সজ্জিত। যা শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনে আক্রমণ করতে সক্ষম।
সূত্র জানায়, সাবমেরিন দুটি বাংলাদেশে আনার জন্য দুদেশের নৌবাহিনীর অফিসার ও নাবিকদের যৌথ তত্ত্বাবধানে বাস্তব প্রশিক্ষণ ও সি-ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন করা হয় গতবছরই। ০৩৫ জি ক্লাসের সাবমেরিন দুটি বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। কথা ছিল এই বছরের শুরুতে বানৌজা ‘নবযাত্রা’ এবং বানৌজা ‘জয়যাত্রা’ নামে নৌ বহরে যুক্ত হবে। সেই হিসেবে যুক্ত হয়েছে। আর আজ কমিশনিং লাভ করছে।
সূত্র জানায়, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভূ-খ-ের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা অর্জিত হয়েছে। এই বিশাল সমদ্র এলাকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা, এই সম্পদের হেফাজত এবং বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের সমুদ্রে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করা অপরিহার্য। এই জন্য নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে নতুন নতুন যুদ্ধজাহাজ সংযোজন এবং পুরনো যুদ্ধজাহাজকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আর এর ফলে নৌবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বহুলাংশে বেড়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৯৭১ সাল থেকে কাজ করছে। নৌপথে যুদ্ধ করা ও নৌ সীমানার নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অংশীদার। রাষ্ট্রপতি সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মূল সেøাগান ‘শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়’। তাদের পোশাক সাদা ও নীল। নৌবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর একটি অংশ। এটি বর্তমানে উপকূলবর্তী এলাকা পর্যবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত আছে, তবে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নৌবাহিনী দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আধুনিকায়নের দিকে মনোনিবেশ করছে। ইতোমধ্যে ২০১১ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এভিয়েশন উইং চালু করেছে। গত বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে প্রথমবারের মতো ‘নারী নাবিক’ যুক্ত হয়।
নৌবাহিনীর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় উপহার পাওয়া মাত্র দুটি টহল জাহাজ ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ নিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যাত্রা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০নং সেক্টরের অধীনে এই বাহিনী যুদ্ধ পরিচালনা করে। খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ এই বাহিনীর পরিচালিত সফল অভিযানগুলোর অন্যতম। বর্তমানে প্রায় ২৪০০০ নৌ সেনা (কর্মকর্তাসহ) এবং প্রায় ছোট-বড় ১১০টি জাহাজের এই বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর র্যাংক এর মধ্যে কমিশন্ড অফিসার র্যাংক এ রয়েছেন ভাইস এডমিরাল, রিয়ার এডমিরাল, কমোডর, ক্যাপ্টেন, কমান্ডার, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার, লেফটেন্যান্ট, সাব লেফটেন্যান্ট, মিডশিপম্যান, অফিসার ক্যাডেট, নাবিক, নন কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও)
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৫টি প্রশাসনিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক্সিকিউটিভ (এক্স), ইঞ্জিনিয়ারিং (ই), ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এল), সাপ্লাই (এস), শিক্ষা, নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সশস্ত্রবাহিনীকে যুগপোযোগী করার লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল ২০৩০ নামে মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর মধ্যে নৌবাহিনীকে এয়ার উইং ও সাবমেরিন সহকারে একটি ত্রিমাত্রিক ও যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। নৌবাহিনীর যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশে নৌবহরে আরও যুদ্ধজাহাজ সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নৌবাহিনী ২টি মিসাইল ফ্রিগেট, ৪টি মিসাইল করভেট ও ৫টি দেশে তৈরি অফশোর পেট্রোল ভেসেল নৌবহরে যুক্ত করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্বাধুনিক জাহাজ বানৌজা বঙ্গবন্ধুতে হেলিকপ্টার এবং জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজিত হয়েছে।
সম্প্রতি নৌবাহিনী চীনের তৈরি ২টি টাইপ ০৫৬ কর্ভেট অর্ডার করেছে। এই যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশ প্রযুক্তিসহ ক্রয় করেছে, যার ফলে এটি দেশেই ভবিষ্যৎ এ তৈরি করা হবে। এছাড়া নৌবাহিনী ২০২১ সালের মধ্যে মিসাইল বোট বহর প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের পেকুয়ায় প্রথম সাবমেরিন বেস স্থাপিত হচ্ছে এবং সম্প্রতি পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দরের নিকটে নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক ঘাঁটি বানৌজা শেরই বাংলা উদ্বোধন করা হয়েছে। যাতে সাবমেরিন ও বিমানচালনা সুবিধা থাকবে।
বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি হচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত ফ্রিগেট ৪টি, ফ্রিগেট ৩টি, ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত ৪টি করভেট, দুটি ডুবোজাহাজ চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। বর্তমানে জাহাজ দুটি নৌবাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়েছে। অফশোর পেট্রোল ভেসেল ১২টি, মিসাইল বোট ৯টি, টর্পেডো বোট ৮টি।
সাবমেরিন অনুসন্ধানকারী জাহাজ ৪টি, গান বোট ৯টি, পেট্রোল বোট ৬টি, ৪টি অর্ডার করা হবে, ডিফেন্ডার ক্লাস বোট ১৬টি, প্রশিক্ষণ জাহাজ ২টি, মাইন অনুসন্ধানকারী জাহাজ ৫টি, উভচর যুদ্ধ জাহাজ ১১টি, সহায়ক জাহাজ ২৪টি। বাংলাদেশ নেভাল এভিয়েশনে ১৪ জুলাই ২০১১ হতে ২টি অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড এডব্লিউ-১০৯ হেলিকপ্টার দিয়ে বাংলাদেশ নেভাল এভিয়েশন যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ নেভাল এভিয়েশন চট্টগ্রাম বিমান স্টেশন থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং অগ্রবর্তী ঘাঁটিগুলো হচ্ছে পটুয়াখালী, ঢাকা খুলনা এবং কক্সবাজার। হেলিকপ্টার ২টি। এডব্লিউ-১০৯, উদ্ধার ও অনুসন্ধান কে এন-২ ২০১১ সালের ১৪ জুলাই হতে সরবরাহিত জেড-৯ সি, ডুবোজাহাজ সনাক্তকরণ, উদ্ধার ও অনুসন্ধান সি-৩ ২০১৬ সালে যুক্ত হয়। ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফট ২টি, ডরনিয়র ডিও-২২৮, সামুদ্রিক টহল এনজি-২ ২০১৩ সালের ৩ জুন হতে সরবরাহিত।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে অবস্থানের দিক দিয়ে নৌবাহিনী দ্বিতীয়। প্রথম সেনাবাহিনী। আর তৃতীয় বিমান বাহিনী।
এদিকে নৌবাহিনী নিয়ে বর্তমান সরকার অনেক পরিকল্পনা করেছে। এর বাস্তবায়নও করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে দেশেই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে এর আগে তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।
সম্প্রতি নৌবাহিনীতে তিনটি নতুন যুদ্ধজাহাজ অন্তর্ভুক্তির অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, আমাদের সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, চলতি বছরে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হতে যাচ্ছে বহু আকাক্সিক্ষত দুটি সাবমেরিন। ‘এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ শিপইয়ার্ডে নিজস্ব প্রযুক্তিতে সাবমেরিনের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া যুদ্ধজাহাজ সমুদ্র অভিযান এবং চীনের তৈরি স্বাধীনতা ও প্রত্যয় এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা নৌবাহিনীকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি সদস্যের নৈতিক মূল্যবোধ ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, নৌবাহিনীর অবস্থান আরও সুসংহত এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নৌবাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আরও দুটি করভেট চীনে নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গতবারেরও এই সরকারের সময় নৌবাহিনীর উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সরকার নৌবাহিনীর জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে। এরই অংশ হিসেবে এরই মধ্যে নৌবাহিনীতে ১৮টি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ সংযোজন করেছে। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় ভারত থেকে সংগ্রহ করা ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ নামে দুটি পেট্রোল ক্রাফট নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ঈসা খানকে প্রথম নেভাল এনসাইন দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে নৌবাহিনীতে মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযুক্ত হয়েছে। এতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি দ্বিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
নৌবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশাল সমুদ্র আপনাদের কর্মক্ষেত্র। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে উত্তাল সমুদ্রে দিবারাত্রি কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্য নিষ্ঠার যে উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত আপনারা স্থাপন করেছেন, দেশবাসী তা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
বাংলাদেশের সামরিকবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান রেখে চলেছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের অবদান অপরিসীম। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের মধ্যে প্রায় চার হাজার জন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয়। পশ্চিম সাহারা, লাইবেরিয়া, লেবানন, ডিআর কঙ্গো, মালি, আইভরি কোস্ট, দারফুর, মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে শান্তিরক্ষী মোতায়েন করেছে। বাংলাদেশের নৌবাহিনী সেখানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। এছাড়া শান্তিরক্ষা বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন প্রাণ দিয়েছেন।
নতুন কমিশনিং পাওয়া সাবমেরিন এর ভিডিও দেখা যাবে এই লিঙ্কে।
যঃঃঢ়ং://িি.িুড়ঁঃঁনব.পড়স/ধিঃপয?া=সৎয়মমীয়ঈ৬ড়৪