ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সুযোগ নেই জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কারা ক্ষমতায় যেতে চান প্রধানমন্ত্রী তা স্পষ্ট করেছেন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: বাংলাদেশ কেন প্রায় সব দেশের নির্বাচনেই আন্তর্জাতিক প্রভাব থাকে। সেই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেরে যাওয়া নিয়ে প্রভাবশালী দুই দেশ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং মার্কিন প্রভাবের কথা বলে ভুল করেননি। দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে অন্য দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার বিষয়ে নাক গলায়। তাছাড়া ভারতের এই গোয়েন্দা সংস্থাটি দ্বি-মুখী নীতি অবলম্বন করে থাকে।
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আমাদের অর্থনীতিকে আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য দিয়ে ভালো করেছেন। তথ্য প্রমাণ ছাড়া একজন প্রধানমন্ত্রী কথা বলতে পারেন না। তাছাড়া তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন এই দুটি দেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় চায়নি। আরেকটি বিষয় প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন না। তার কাছে দেশের স্বার্থ আগে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ বিসর্জন দেননি বলেই সেই সময় দুটি দেশ চায়নি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসুক।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার অভিজ্ঞতা সংসদে বলে জনগণের কাছে স্বচ্ছ হয়েছেন। জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যেতে অন্য দেশকে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজে লাগায় এটা দেশবাসী জানতে পারলো। আওয়ামী লীগ সেই সময় যে ক্ষমতায় থেকেও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কোন কাজ করেনি এটা সবাই জানলো। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারত বা আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে এই রকম বক্তব্য দিয়েছে- কেউ কেউ বলতে পারে সরকারের সঙ্গে ভারতের বা আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ। আমি এর সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখছি, এই দুটি দেশের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক ভালো। তাছাড়া দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো ঘটনার সঙ্গে যদি কোনো রাজনৈতিক দল জড়িত থাকে, তা জনগণের জানা উচিত। শেখ হাসিনা ঠিকই করেছেন। আগামীতে জনগণ ভাববে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে যারা ক্ষমতায় যেতে চায়, তাদের ব্যাপারে মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনটি ছিল স্বাধীনতার পর যে তিনটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে তার একটি। সেই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী নিজের মুখে এই বক্তব্য দেওয়া অনাকাক্সিক্ষত এবং এটা অপ্রত্যাশিত। যদি সেই নির্বাচন আমেরিকা বা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে থাকে, তাহলে কেন আওয়ামী লীগ সেই সময় প্রতিবাদ করল না। আর তাদের কাছে যদি সত্যিকার তথ্য থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রীকেই কেন সংসদে বলতে হবে। অন্য কেউ কি বলতে পারে না। এই বক্তব্য বাংলাদেশের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রী সংসদে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। কারণ ভারতীয় এই গোয়েন্দা সংস্থা সবসময় দুই মুখীনীতির নিয়ে থাকে। এখন যেমন তারা তিস্তা চুক্তি ও গঙ্গা ব্যারেজ নিয়ে নিজের মতো করে বাংলাদেশের সঙ্গে আচরণ করছে। তারা সরকারকে বিব্রত করছে। ২০০১ সালে যেই দল জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ভারতীয় এই সংস্থা এখন সমরাস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির কথা বলছে। পৃথিবী জুড়েই প্রভাবশালী দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে আমাদের মতো দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সেখানে তাদের তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষমতার লোভ দেখায়। জাতীয় স্বার্থ না দেখে অনেক দল ক্ষমতায় জানার জন্য দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে। সম্পাদনা: রাশিদ