২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস : আনন্দ ও বেদনার গল্প
হাশেম খান
২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। অনেকের সমর্থন, অংশগ্রহণ থাকলেও এই দাবির পেছনে দুজন মানুষের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। শাহরিয়ার কবির ও মুনতাসির মামুন। ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করে আসছিলেন। আমরা যে বুঝি না তা না। বুঝি। আমাদের সরকারপ্রধানও বিষয়টি ভালোভাবেই বোঝেন। অনুধাবন করেন। তার ফলেই এই ঘোষণা এসেছে।
শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুনের একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি দীর্ঘকাল ধরে এ দাবিটি নিয়ে কাজ করে আসছেন। তাদের নেতৃত্বে চলা এই আন্দোলনে আমিও সম্পৃক্ত ছিলাম। আমরা বারবার বলে আসছিলাম ২৫ মার্চ যেন গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হয়। গণহত্যার বিষয়টি যদি সামনে নিয়ে আসা না যায় তাহলে নতুন প্রজন্ম ইতিহাসের ধারাবাহিকতা থেকে বঞ্চিত থাকবে। যতদিন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় ছিল, প্রকৃত ইতিহাস ধামাচাপা দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমূল্যায়ন করা, বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করে দেখা, মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবদান স্বীকার না করা। আমরা এখন অনেক কথা বলতে পারিÑ কিন্তু সত্য ইতিহাসকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
২৫ মার্চ যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল এদেশে তা আর পৃথিবীর কোথায় কি হয়েছিল? মনে হয় না। এই গণহত্যার কথা এতদিনেও পৃথিবীকে পরিষ্কারভাবে জানাতে পারিনি। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। আজকে ৪৫ বছর পর শেখ হাসিনা সরকার এটি বাস্তবায়ন করেছে। পার্লামেন্টে পাস করিয়েছেন। শেখ হাসিনা ২৫ মার্চের গণহত্যার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে, দেশবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছেন, দু লাখেরও বেশি মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন, তাদের এই ত্যাগ, অবদান বিশ্ব ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমার বড় ভাই ডাক্তার ছিলেন, তাকে আমার সামনে গুলি করা হয়েছিল। আমিও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গেলেও ভাইকে বাঁচাতে পারিনি। এটা ছিল আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। এমনভাবেই দেশের লাখো পরিবার, কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে অবদান রেখেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন এদেশকে শত্রুমুক্ত করতে। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণা আমার জন্য একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনারও।
আমরা আশা করছিÑ বর্বর এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও আমরা আদায় করতে পারব। এদেশের ১৬ কোটি মানুষ যদি আবেদন জানাই বিশ্ববাসীর কাছে, তাহলে কেন এই বর্বরতার স্বীকৃতি পাব না? আমরা অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও আদায় করতে সমর্থ হবো।
পরিচিতি: চিত্রশিল্পী
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান