আদালতের নির্দেশনা হাতে এলেই ট্যানারি বন্ধ করা হবে : মালিকপক্ষ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মালিকদের কোনো বিরোধিতা নেই। তবে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তরে যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পুরোপুরি প্রস্তুত নয় বলে আমরা আদালতের কাছে সময় চেয়েছিলাম। আদালতের রায় শিরোধার্য। আদালতের রায় নির্দেশনা হাতে পেলেই এখনো হাজারীবাগে যেসব কারখানা চালু রয়েছে, সেগুলো লে-অফ ঘোষণা করা হবে।
চামড়া শিল্প মালিকরা বলেন, আমরা আদালতের কাছে এ বছরের জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। এ পর্যন্ত ৫৪টি কারখানা স্থানান্তর হয়ে গেছে। সাভারে গ্যাস লাইন ও প্লট রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ হলেই ট্যানারি মালিকরা তাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারত। ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশিড লেদার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা গতকাল আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, আমরা আদালতের কাছে এ বছরের জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। আদালতের রায় অবশ্যই শিরোধার্য। আমরা আদালতের প্রতি সম্মান দেখাব। আমরা চাই সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে হেমায়েতপুরে গ্যাস সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক।
তারা জানিয়েছে, দ্রুত হেমায়েতপুর কারখানা চালু করতে সাভারের চামড়া পল্লীতে গ্যাসের সংযোগের বিষয়ে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারাও আশ্বাস দিয়েছে। তবে এখন থেকে কাজ শুরু করলে হেমায়েতপুরে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন স্টেশনের কাজ শেষ করতে ৬ মাস সময় লাগবে। আর এত বড় সময় কারখানা বন্ধ থাকলে মালিকদের অনেকেই আর ব্যবসা করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, আমাদের এখন কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা ছাড়া উপায় নেই। এমনিতেই এ মাসের মধ্যে হাজারীবাগে ওয়েট ব্লু বন্ধ করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু ওয়েট ব্লুর পর চামড়া ক্রাস্ট ও ফিনিশড এর যে দুটো ধাপ, তার জন্য গ্যাস সংযোগ বাধ্যতামূলক। লাইন বিচ্ছিন্ন করলে ওয়েট ব্লু করা চামড়া ক্রাস্ট ও ফিনিশড করা যাবে না। তিনি বলেন, কারখানা বন্ধ হলে অন্তত পক্ষে ৩০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হবে। কারখানা না চললে তাদের বেতন-ভাতা দিতে পারবে না।
চামড়া শিল্প মালিকরা বলেছেন, চামড়া শিল্প কারখানা স্থানান্তরে বড় সমস্যা নতুন গ্যাস সংযোগ। সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া মালিকদের জন্য যে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে সেটি এখনো কাজের জন্য উপযোগী হয়নি। এখনো মালিকদের প্লটবরাদ্দ সম্পূর্ণ করা হয়নি এবং রেজিস্ট্রেশন শেষ হয়নি। এছাড়া যেসব মালিক ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি কিনেছেন, সেসব যন্ত্রপাতি স্থানান্তরের ব্যাপারে ব্যাংক অনুমোদন মিলছে না।
বাংলাদেশ টেনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাকাওয়াত উল্লাহ বলেছেন, আমরা তো চলেই গেছি। ১৫৪টি কারখানার মধ্যে ৪৪টি চলে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে আরও ৫০টি প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিয়েছে। আবার ১৫৪টি কারখানার মধ্যে সবগুলোই সমান চালু নয়। অনেকগুলো বন্ধ রয়েছে। হেমায়েতপুর চালু করবে। বিসিক বা সরকার যাই বলি, তারা সমস্যা বোঝে। কারণ সরকারের সঙ্গে চামড়া শিল্প মালিকদের অনেক বৈঠক হয়েছে। নতুন গ্যাস সংযোগ না হলে উৎপাদন বন্ধ থাকবে এবং দেশের রপ্তানি বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। আর ব্যবসায়ীরা এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেবে? চামড়া শিল্পের কারখানাগুলো স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান চলে গিয়েছে। আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যে আরও ৫০টি কারখানা চলে যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের জুন/জুলাইয়ের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর হয়ে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকার সময়ও দিয়েছে। কিন্তু কিছু উৎসাহী ব্যক্তি এ পর্যায়ে নিজেদের কৃতিত্ব ফলাতে উঠেপড়ে লেগেছে। সাকাওয়াত উল্লাহ বলেন, ট্যানারি সরিয়ে নিতে এই শিল্পের মালিকদের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। তাই আমাদের এভাবে চাপ দিয়ে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলা উচিত নয়। আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করব। তিনি বলেন, গত এক মাস থেকে এখানে হাজারীবাগে কাঁচামাল প্রবেশ করছে না। ফলে দূষণের পরিমাণ একেবারে নেই বললেই চলে। এটা পরিবেশবাদীদের জানা উচিত। এখন কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় রয়েছে, যেমন কোনো কোনো মালিকের ব্যাংক ঋণ রয়েছে। তাছাড়া সাভারের হেমায়েতপুর চামড়া শিল্প মালিকদের জন্য যে জায়গা দেওয়া হয়েছে, তা এখনো রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে পরিবেশবাদীদের এই চাপ যৌক্তিক নয়। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানে, কেন কারখানা স্থানান্তর করা হচ্ছে না। তাছাড়া আমরা এ পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি টাকা হেমায়েতপুর বিনিয়োগ করেছি। সরকার আড়াইশ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। আমরা যে কারখানা স্থানান্তর করব এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ করে তো আমরা রাস্তায় বসে যেতে পারব না।
সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবরে ৬ মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে ২০১১ সালে ৩০ এপ্রিলের পর হাজারীবাগে ট্যানারি চালানোর অনুমোদন নেই। এরপরও সরকার চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেন। এ সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নেয়নি। এ কারণে জানুয়ারিতে আদালতে আবেদন করেছে পরিবেশবিষয়ক আইনজীবী সংগঠন (বেলা)। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত হাজারীবাগ থেকে সাভারে সরিয়ে না নেওয়া ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধ এবং কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দিয়েছেন। এরপর ট্যানারি মালিকরা জুন পর্যন্ত সময় চেয়ে আপিল করেন। গত রোববার আদালত তাদের আবেদন নাকচ করে দেয়। সম্পাদনা: রাশিদ