বিজিএমইএর সর্বশেষ চেষ্টা রাষ্ট্রপতির কাছে তদ্বিরের পরিকল্পনা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা আদালতের বেঁধে দেওয়া ছয় মাসের মধ্যে সম্ভব হবে না। আরও সময়ের প্রয়োজন। এই জন্য নতুন করে আদালতের কাছে আবারও সময় চাওয়ার কথা ভাবছে বিজিএমএইএ। এটা তারা করতে চাইছে রায়ের কপি পাওয়ার কয়েকমাস পর। এর আগে তারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হতে চাইছেন। বিজিএমইএ এর নেতারা তার সঙ্গে দেখা করেও সময় বাড়ানোর আবেদন করবেন। তার কিছু করার থাকলে তা করার জন্য অনুরোধ করবেন। এই জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের বিষয়ে সেই দেশের আদালতের আদেশের বিষয়টিও রাষ্ট্রপতিকে জানাবেন। আদালত রায় দেওয়ার পর কি হয়েছিল সেটাও জানাবেন। সেই সঙ্গে নেতারা রাষ্ট্রপতিকে আরও জানাবেন, বিজিএমইএ একটি এসোসিয়েশন । এই সমিতির টাকা নেই। তাই ভবন ভাঙ্গার টাকা প্রদান করা সম্ভব হবে না। এই কারণে ভবনটি না ভেঙ্গে এটিকে যাতে জনকল্যানমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করবেন। সেখানে সরকারি একটি হাসপাতালের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেবে বিজিএমইএ। যাতে করে দরিদ্রমানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে পারে। এই আবেদন নিয়ে বিজিএমইএ’এর নেতারা রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এই তথ্য জানিয়েছেন বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, তারা রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে আবেদন জানাবেন যাতে তিনি তাদেরকে সহায়তা করেন। যাতে ওই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা না হয়। এসোসিয়েশন থেকে কোনো টাকা দিতে না হয়। কারণ ভবন ভাঙ্গার মতো টাকা নেই বলে জানান বিজিএমইএ’এর সভাপতি। তিনি বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আদালতের রায় মেনে নিয়ে আমরা ভবনটি ছেড়ে চলে যাবো। এই জন্য আমরা উত্তরায় জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করছি। এই মাসের পাওয়ার আশা করছি। জায়গা পেলে সেখানে ভবন তৈরি করে আমরা উত্তরাতে চলে যাবো।
ছয়মাসে কি ভবন তৈরি করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবন ছয়মাসের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব হবে না।
তাহলে আপনারা কি কোনো অফিস ভাড়া নিচ্ছেন? পুরনো যে অফিসে কাওরান বাজারে ছিল সেখানে অফিস নেওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে ভাড়া নেওয়া যাবে না। আমরা আর কোনো ভাড়া অফিসে যেতে চাইছি না। ভবন তৈরি করেই যাবো। কারণ এই অফিসে দেশে বিদেশের অনেক মানুষ আছেন যাদেরকে ভাড়া অফিসে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই জন্য আমরা আদালতের কাছে আবারও সময় চাইবো। এই জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে আদালত রায় দিয়েছে, বিজিএমইএ ভবনের ফ্লোর যাদের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছিল, সেই সব ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া সম্ভব হবে না ৬মাসের মধ্যে। কারণ ওই পরিমাণ টাকাও নেই।
এদিকে বিজিএমইএ এর সূত্র জানায়, বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করেই এই ভবন তৈরি করা হয়েছিল। ভেঙ্গে ফেললেতো সব শেষ। এই কারণে আমরা চাই আদালতও আগামী দিনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের কথা বিবেচনা করবে।
এদিকে আইন অনুযায়ি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে ওই ভবনটি ভাঙ্গার। ৬ মাস সময়ও দিয়েছে। সেখানে এর কোনো বিকল্প নেই। ভবন ভাঙ্গতেই হবে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে ছয়মাসের মধ্যেই তা করতে হবে। এছাড়াও আদালতের রায়ের উপর কারো কোনো কিছুই করার নেই। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীরও আদালতের সিদ্ধান্তের উপর কিছু করার নেই। আদালতের রায়ের প্রতি সবার সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই রায় কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। এরপরও রাষ্ট্রপতির কাছে বিজিএমইএ’এর নেতারা কেনো যেতে চাইছেন, এই ব্যাপারে জানতে চাইলে, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আমাদেরকে এই ভবনে থাকতে না দিক। সেটা না হয় এসোসিয়েশনের অফিস চলে যাবে। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে তা সম্ভব হবে না। এই কারণে চেষ্টা করা হবে আদালতের সময়ের মধ্যে চলে যেতে। তবে ৬ মাসের মধ্যে যেতে না পারলে সময়টা বাড়ানোর জন্য আদালতে ফের আবেদন করা হবে। বাস্তবতা তুলে ধরে আদালতের কাছে সব বলা হবে। তিনি বলেন, আমি যেহেতু ওই ভবন তৈরির সময়ে ছিলাম এই কারণে আমার একটি অভিমত আছে, তাহলো আমরা ছেড়ে গেলেও যাতে ভবনটি ভাঙ্গা না হয়, ওই ভবন ভাঙ্গার জন্য যে টাকা দরকার তা এসোসিয়েশনের নেই।
আর সবচেয়ে বড় কথা রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানানো হবে যাতে করে তিনি বিজিএমইএ’এর বিষয়টি বিবেচনা করে ভবন ভাঙ্গার যে ৬ মাস সময় দেওয়া হয়েছে ওই ভবনটি না ভঙ্গে সেখানে সরকারি কোনো হাসপাতাল কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে জনকল্যাণকর কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেন।
রাষ্ট্রপতির এই ধরণের এখতিয়ার আছে এমন কোনো বিষয় তারা জানতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পর সব বিষয়গুলো দেখা হবে। ইতোমধ্যে আইনজীবীদের কাছ থেকেও এই ব্যাপারে পরামর্শ করা হচেছ। আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক তিনি রাষ্ট্রের প্রধান, সেই জন্য তার কাছে যাবো। আবেদন জানাবো। এরপর রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করবেন। সেই সঙ্গে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করা হবে। আমর ভবন ছেড়ে গেলে তিনি সরকার প্রধান হিসাবে কিভাবে সহায়তা করতে পারেন সেটাও চেষ্টা করা হচেছ। কারণ দেশে রেমিটেন্সের ৮২ শতাংশ আসে আমাদের সেক্টর থেকে।
এদিকে বিজিএমইএ ভবনভাঙ্গার আদালতের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শ্রমিক নেতারা একটি বৈঠক করেছেন। সেখানে তারা আলোচনা করেছেন কিভাবে তারা এসোসিয়েশনকে সহায়তা করতে পারে। দেশে আগে ৪৪ লাখ পোশাক শ্রমিক ছিল। এই সংখ্যা আরও কমেছে বলেও জানায় বিজিএমইএ। আর বৈঠকে শ্রমিকরা ১৫-২০ টাকা করে দিতে চেয়েছে। ৪৪ লাখ শ্রমিক ২০ টাকা করে জমা দিলে টাকার পরিমাণ হবে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেই টাকা দিয়ে কিছুই হবে না।
এসোসিয়েশনের নেতারা টাকা দিলেইতো ভবন ভাঙ্গার টাকা হয়ে যাবে এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে। এছাড়া ভবন বানানোর জন্য বিজিএমইএ ঋণ নিতে পারে । এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এসোসিয়েশনের জন্য মালিকরা সেইভাবে টাকা দিবে না। কারণ তাদেরতো সবার অবস্থা ভাল না। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। সব সদস্যরা টাকা দিতে পারবে না। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত