রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য রপ্তানি আয় কমেছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে বেড়েছে জার্মানি-চীনে
হাসান আরিফ: চলতি অর্থবছরে ১২ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৮ মাস শেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ৮ মাসে এসে তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা নিয়ে শংকা কাটছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৪ কোটি ৮ লাখ ৫৭ হাজার ডলারের পণ্য। একই সময়ে জার্মানিতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৪৭৭ ডলারের। সেই হিসাবে আট মাসে দুই দেশের রপ্তানির ব্যবধান প্রায় ৬ কোটি ডলার। এই হিসাব বলছে, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি হলে এসেছে জার্মানি। গত অর্থবছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪১০ কোটি ৭ লাখ ডলার ও জার্মানিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩২১ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের। এই হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে জার্মানির চেয়ে প্রায় ৯০ কোটি ডলারের পণ্য বেশি রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আট মাস পর সেটি কমে ৩ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ দিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে জার্মানিতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এহিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে জার্মানির বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধিই মূলত প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। একই ভাবে চীনেও রপ্তানি বেড়েছে। গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে চীনে রপ্তানি হয়েছে ৬৩ কোটি ৬ লাখ ডলারের। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। তবে বাংলাদেশের জন্য জার্মানির মতো বড় নয় চীনের বাজার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছরের প্রথম আট মাসে ৩৭১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। চলতি বছরের আট মাসে যা হয়েছে ৩৪২ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যেও কমেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি। তৃতীয় এই গন্তব্যস্থলে প্রথম আট মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২১১ কোটি ডলারের। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২২০ কোটি ডলার।
অন্যদিকে, জার্মানিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি এই আট মাসে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে জার্মানিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৫৫ কোটি ডলারের। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩০০ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
শুধু ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪০ কোটি ৭৮ লাখ ৬৩ হাজার কোটি ডলারের। মূলত এ খাতের নিট পোশাকের চাহিদাই জার্মানিতে রপ্তানি বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে মূলত ওভেন পোশাক (প্যান্ট, শার্ট, ট্রাউজার) আমদানি করে। ইউরোপের দেশগুলো করে নিট পোশাক (গেঞ্জি, সোয়েটার)। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নিটের চাহিদা বেড়েছে।
রপ্তানি কমেছে জাপান, কানাডাতেও। আট মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে জাপানে রপ্তানি কমেছে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। কানাডাতে কমেছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে বেড়েছে স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে স্পেনে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ, ইতালিতে বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও ফ্রান্সে বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে ৯০৭ কোটি ডলার আর ওভেন পোশাক থেকে ৯৫৬ কোটি ডলার এসেছে। গতবারের চেয়ে এবার পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। সম্পাদনা: এনামুল হক