প্রতিরক্ষা চুক্তি ও তিস্তা চুক্তি হবে এ বিষয়টি এখনই বলা যাবে না : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহয়রিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে এমন কথা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ সেখানে যাওয়ার পর এই বিষয়ে আলোচনা হলে এরপর বোঝা যাবে চুক্তি হবে কি না। গতকাল রাতে তিনি এই প্রতিবেদককে এই কথা বলেন।
তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও নিশ্চিত নয়। সফরের আগে এখানে বসে বলা যাবে নাÑ কি হবে আর কি হবে না। এখানে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। এছাড়া যে চুক্তি হোক না কেন আলোচনা করতে হবে। আর আলোচনা করেই ঐকমত্য পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফরের আগে আসলে ওইভাবে নিশ্চিত করে বলা যাবে না সেখানে কোন কোন চুক্তি হবে না। আর কি কি চুক্তি হবে। চুক্তি হলে ওই চুক্তিতে কি কি থাকবে। কারণ এখানে বলে রাখা প্রয়োজন সামরিক চুক্তির বিষয়টি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসছে। বিএনপিও এটাকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে। তারা মনে করছে, এইভাবে প্রচারণা হলে সমস্যা। এটা কোনো নর্মসের মধ্যেও পড়ে না। কারণ একটি চুক্তি হওয়ার আগে অনেক বিষয় থাকে। চাইলো আর চুক্তি হলো এমন তো নয়। এ নিয়ে আলোচনা ছাড়া কি এখানে বসে ঠিক করা যাবে ওখানে যাওয়ার পর কি হবে?
সামরিক চুক্তির বিষয়টি হলে চীন ও রাশিয়া বিষয়টি কেমন ভাবে নিবে সেই সব বিষয়গুলো বিবেচনায় রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এর আগেও যখনই ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি করেছি সেখানে আমাদের দেশের স্বার্থের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর এখানেও স্বার্থের বিষয়টিও প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমরা মনে করছি একটি চুক্তি করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের স্বার্থই বড়। বিশেষ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার নেতৃত্বে যখনই যে দেশের সঙ্গে চুক্তি হবে সেই চুক্তি দেশের স্বার্থের বাইরে হয়নি। আগামী দিনেও তার নেতৃত্বের সরকারের আমলে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হবে না। তাছাড়া দেশের স্বার্থের জন্য আমরা অপেক্ষা করতেও রাজি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ছিটমহলের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে কত সময় লেগেছে। এটাতে প্রমাণ হয়েছে যেকোনো কাজের জন্য অপেক্ষা করলে এর ফল ভালই হবে। সেই হিসাবে আমরা আগামী দিনেও কোনোকিছু তড়িঘড়ি করে করতে চাই না। যেকোনো চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেই করা হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাবেন আর এই সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এরপরও বলব যে এই সফরে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হবে না। দেশের মানুষকে বিশ্বাস রাখতে হবে। বিএনপির কিছু নেতা ভারতের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলছে। এই সব কথা তারা বলছে ভারত বিরোধিতা থেকেই।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে মমতা ব্যানার্জির মতো পাল্টেছে কি না এমন কোনো খবর তাদের কাছে রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। কিন্তু এখনই বলতে পারব না কি হবে? তাই ওখানে যাওয়ার পরই আমরা বুঝতে পারব চুক্তিগুলো হবে কি না? অতীতে এই বিষয়ে যে কাজ হয়েছে সেই হিসেবে কাজ করা হবে।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপি বৈরিতা তৈরি করে রাখতে চায়। কিন্তু তারা ভারতবিরোধিতা করে আবার কখনো কখনো তারা ভারতের পক্ষেও অবস্থান নেয়। যখন তাদের যেভাবে সুবিধা হয়। তবে আমরা বিরোধিতা করি না। কারণ প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আমরা সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি আরও জোরালো করতে চাই। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক আছে সেই সম্পর্ক আরও জোরালো করা হবে।
প্রতিরক্ষাবিষয়ক চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যখন ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে তখন বিএনপি বলেছে এটা একটা গোলামী চুক্তি। আবার তারাই বলেছে চুক্তির বাস্তবায়নের বিষয়ে। দ্বিমুখী নীতি হলে তো হবে না।
শাহয়রিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কেবল তিস্তা ও সামরিক চুক্তির বিষয়গুলো সামনে আসছে। আলোচনায় আসছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সফরকালে আরও তো বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হবে। সেই বিষয়গুলো তো কেউ বলছে না।
বিএনপি সামরিক চুক্তি নিয়ে যে কথা বলছে তাতে মনে হচেছ এই চুক্তি করলে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হবে না আরও অনেক কথা বলছে। কিন্তু আসলে এই চুক্তি করার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার সেটা বাংলাদেশ নিবে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হলেই চুক্তি হবে। স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যাচ্ছেন ৮ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হবে। তিনি ১০ এপ্রিল দেশে ফিরবেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে সফরকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতির অতিথি হিসেবে অবস্থান করবেন। সেইসঙ্গে তার রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করবে। সেখানে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে। এছাড়াও এর আগে আজকালের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিককে ভারত সফরের বিষয়ে আগাম জানাবেন। এই ব্যাপারে যাতে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি ও বিএনপি জোট কোনো বিরোধিতা করতে না পারে ও ভারত বিরোধী প্রচারণা করতে না পারে সেই জন্য অবস্থান স্পষ্ট করবেন।