গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় বামপন্থিদের উপর পুলিশের হামলা
আহত ৫০ নেতাকর্মী
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও শাকিল আহমেদ: গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের লাঠিচার্জে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম দলগুলো জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়। পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথাকাটাকাটি ও সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ এসময় নেতাকর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে। পরে জলকামান ও কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়ে।
উল্লেখ্য, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হরতালের পর জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল বাম দলগুলোর পক্ষ থেকে। সে অনুযায়ী গতকালবেলা ১১টার দিকে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় জড়ো হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা বেলা ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে পল্টন ঘুরে প্রেসক্লাবের পূর্ব পাশের গলি দিয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। তারা ব্যারিকেড ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল ও জলকামান ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন বাম দলগুলোর নেতাকর্মীরা। এ সময় সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের অনেক কর্মী আহত হয়েছে। হামলার প্রতিবাদে আজ প্রেসক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দেন তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের প্রায় ৫০ জন কর্মী হামলায় আহত হয়েছে। সরকার যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে তার সিদ্ধান্ত না পালটায় তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ছাইদুল হক নিশান দাবি করেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র সংঘের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ রায়, নগর সংগঠক অর্নব চক্রবর্তী, ছাত্র ফ্রন্টের অপু ও সরিফুল গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করলে সংগঠনের নেতা জুনায়েদ সাকি তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
সিপিবি নেতারা বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে সরকারের ন্যূনতম মানবিকতাবোধ থাকলে আন্দোলনকারীদের কাছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি পাঠাতে পারত। আলোচনা করে তারা কর্মসূচি স্থগিত করতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে পুলিশ দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর জল কামানের পানি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সিপিবি-বাসদের ঘেরাও পূর্ব সমাবেশে বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবি নেতা ডা. সাজেদুল হক রুবেল। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবি নেতা আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে গ্যাসের দাম কমানোর আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, দাম না কমানো পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত