স্বামী-স্ত্রীর অধিকার কী?
ইসমাঈল আনিস
বিয়ের মাধ্যমে রচিত হয় এক নতুন বন্ধন। প্রেম-ভালোবাসার বন্ধন। যেখানে তারা এমন কিছু আবশ্যকীয় অধিকার আদায়ের দায়িত্বশীল হয়ে যায়, যেগুলো আঞ্জাম দেওয়া ব্যতিত স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে সুখ-সাচ্ছন্দের জীবন যাবন করতে পারে না। অতএব, স্বামীর হক আদায় করা যেমনিভাবে স্ত্রীর উপর আবশ্যক, অনুরুপ স্ত্রীর হক আদায় করাও স্বামীর উপর সমানভাবে আবশ্যক। শরীয়ত কর্তৃক হক আদায়ের এমন সমানরেখা নির্ধারণের মূল উদ্দেশ্য হলো, স্বামী-স্ত্রী যেন পরস্পরের অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রেখে সম্মান- সাচ্ছন্দময় জীবন অতিবাহিত করতে পারে। বিবাহের পবিত্রতম বন্ধনে যেন পারস্পরিক বিবাদ-কলহ, আত্মপীড়া ও বেমিল তৈরি না হয়। এবং বিবাহ নামক ভালোবাসাসা- মহব্বতের বন্ধনে বিচ্ছেদের সুযোগ না আসে।
হাদিসে এসেছে, ‘এ ধরাবুকে যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে, তখন শয়তানপ্রধান স্বীয় অনুসারিদের ডেকে ডেকে সারাদিনে কর্মরত শয়তানী কর্মকা- সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে থাকে এবং সবার থেকে হিসেব নিতে থাকে যে, আজ তুমি কী করেছ, তুমি কী করেছ? তখন সবাই নিজ নিজ কাজের বর্ণনা দিতে থাকে যে, আমি অমুক কাজ করেছি, আমি অমুক কাজ করেছি। আমি অমুকের নামাজ নষ্ট করেছি। আমি অমুকের রোজা ভাঙিয়েছি, ইত্যাদি ইত্যাদি। শয়তানপ্রধানকে তাদের এ সকল কাজ তেমন আনন্দ দিতে পারে না। কিন্তু যখন কেউ বলে যে, আমি অমুক স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়েছি। উভয়ের মাঝে ঝগড়ার বীজ বুনে দিয়েছি, তখন শয়তানপ্রধান খুঁশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। এবং একে দরাজকণ্ঠে সাবাস দিতে থাকে। অন্যান্য অনুসারির তুলনায় তার উপর বুক ফুলিয়ে গর্ব করতে থাকে।” সুতরাং যেক্ষেত্রে স্ত্রীর হক রয়েছে, স্বামীর যথাসাধ্য তা পূরণের চেষ্টা করা এবং স্ত্রীকে সুখে রাখার চেষ্টায় কমতি না করা উচিৎ। তাকে কোন বিষয়ে বিষিয়ে তোলা, কিংবা তার মনভাঙা- গালিগালাজ করা থেকে সম্পূর্ণরুপে বিরত থাকা চাই।
বোঝা উচিৎ, স্ত্রী নিজ স্বামীর মহব্বতেই পিতা-মাতাকে ছেড়ে ছুঁটে এসেছে স্বামীর ঘরে, একটু মহব্বত- ভালোবাসা পাবার জন্যই। সে তো স্বামীগৃহে এসেছে দুলহান হয়ে, রাণী হয়ে, চাকরানী হয়ে নয়। এমনিভাবে স্ত্রীরও কর্তব্য হলো, স্বামীর অধিকারগুলোর প্রতি যথাসম্ভব খেয়াল রাখা। কোনক্ষেত্রেই স্বামীর প্রাপ্য হক আদায়ে গড়িমসি না করা, অলসতার আশ্রয় না নেওয়া। শরীয়তের গ-ির ভেতরে থেকেই বৈধপন্থায় স্বামীকে সুখি রাখা। চিন্তা-পেরেশানিতে স্বামীর সঙ্গ দেওয়া, তাকে ছেড়ে না যাওয়া। কখনো এমন যেন না হয়, স্বামী কোন বিষয়ে পেরেশানিতে আছে, চিন্তাগ্রস্ত সময় পার করছে, এমন সময়ে এরুপ কোন কাজ করে বসা, যার কারণে স্বামীর পেরেশানি আরো বেড়ে যায়। যা স্বামীর সান্ত¡নার পরিবর্তে বাড়তি বোঝা হয়ে দেখা দেয়। কখনো এরুপ অবিবেচকের মতো কাজ বিবাহ বন্ধনকেই ভেঙে দেওয়ার উপক্রম হয়। তখন পারস্পরিক মহব্বত- ভালোবাসায়ও কমতি দেখা দেয়। এ বিষয়টি সর্বদা স্ত্রীর মনে রাখা চাই, স্বামী হলো স্ত্রীর জন্য উজ্জ্বল মুকুটস্বরুপ। স্ত্রীর গোলাম তো আর নয় সে!অতএব, স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য হলো, একে অপরের অবস্থান নিয়ে চিন্তা-ফিকির করা। স্বীয় করণীয়, কর্তব্যের প্রতি খেয়াল রাখা। এবং পরস্পরের হককে পূর্ণরুপে আঞ্জামদানে সচেষ্ট হওয়া।