জয় বাংলায় বিজয়ী টুঙ্গিপাড়ার খোকা
নূহ-উল-আলম লেনিন
বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অসম্ভব হয়ে পড়ত। তিনিই একমাত্র বাঙালি নেতা যিনি হাজার বছরের বাঙালি জাতির জন্য একটি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছেন, আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন, সারা দুনিয়ায় আমাদের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আগে এই বাইশ হাজার বছরের মধ্যে একজন বাঙালিও ছিলেন না যে, এই অঞ্চলকে শাসন করেছেন। আর যারাই বা ছিলেন তারাও তথাকথিত স্বাধীন রাজা। তাদের কেউই বাংলাভাষী ছিলেন না। তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল বা দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই একমাত্র নিযুক্ত বাংলাভাষী মানুষ, যিনি মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করে একটি জাতিকে তার রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন, আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, দেশকে স্বাধীন করেছেন এবং দেশের স্বাধীনতার পরে জাতীয় চার নেতাকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার জন্য। দেশের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি তার জীবনের বৃহৎ অংশ কারাগারে কাটিয়েছেন।
ভাষা আন্দোলন, আটচল্লিশ-এর আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের আন্দোলন, ছাপ্পান্নর আন্দোলন, পঞ্চান্নতে যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাওয়া, আইয়ুব খানের শাসন পরবর্তীকালে ছয় দফা আন্দোলন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাÑ জাতির জনকের সমগ্র জীবনই লড়াই-সংগ্রামের ভিতর দিয়ে, কারাগারেই কাটিয়েছেন। খুব অল্প সময়ই তিনি বাইরে থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তার সামনেই তার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিলÑ এগুলোকে উপেক্ষা করেই তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে আমি বলব যে, তিনি পঁচাত্তরে বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি, মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের হাতে প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করলেন যে শেখ মুজিবুর রহমান তার সর্বস্ব দিয়েছেন এই বাংলাদেশের জন্যই, এদেশের মানুষের জন্যই।
এ মানুষটি সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। নতুন প্রজন্মকেও জানাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবন সম্পর্কে জানাতে হবে। তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকেও ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যাবে। কী করে একটা জাতির জন্য লড়াই করা যায়, কি করে রাজনীতিতে একনিষ্ঠ ও নিঃস্বার্থভাবে দেশের সেবা করা যায়, কিভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, রাজনীতিতে ধারণ করে কিভাবে একটা নিরস্ত্র জাতিকে তিনি মুহূর্তে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করলেন এই শিক্ষাগুলো নিতে হবে। কি করে একটা ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি রাষ্ট্র ভেঙে সেখানে দ্বিজাতি তত্ত্বের বেড়া ভেঙে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন এগুলো অবশ্যই আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। জাতির জনকের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে কি আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম? হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মদিনে তার আদর্শেই এগিয়ে যাওয়ার শপথ হোক আমাদের।
পরিচিতি: সাংবাদিক, লেখক ও রাজনীতিক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি/সম্পাদনা: আশিক রহমান