বাংলাদেশ ব্যাংকের আপিল খারিজ ফেরত দিতে হচ্ছে ওয়ান ইলেভেনের সময় নেওয়া ব্যবসায়ীদের টাকা
এস এম নূর মোহাম্মদ: সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত পাবেন সংশ্লিষ্টরা। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা আপিল খারিজ করে দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। এর ফলে ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকলো বলে জানান আইনজীবীরা।
রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী আহসানুল করীম সাংবাদিকদের বলেন, যারা টাকা ফেরত চেয়ে আদালতের দারস্থ হয়েছেন অর্থাৎ যারা মামলা করেছেন তারাই টাকা ফেরত পাবেন। তবে টাকা কবে কিভাবে দেওয়া হবে তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ থাকবে। ওই রায় পাওয়ার পরই বিষয়টি জানা যাবে। আর অন্যরা টাকা ফেরত পেতে চাইলে তাদেরও আদালতে আবেদন করতে হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এতগুলো টাকা সরকার কোথা থেকে ফেরত দেবে তা চিন্তার বিষয়। রিভিউ এর বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমার মনে হয় না এ রায় ইতিহাসে টেকসই হবে। বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হয়। সে সময় ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১২শ ৩২ কোটি টাকা নিয়ে দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
পরবর্তীতে ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্থ ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক ১১টি রিট আবেদন করেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। রিট আবেদনকারীরা হলেন ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ১৮৯ কোটি, বসুন্ধরা পেপার মিল লিমিটেড ১৫ কোটি টাকা, মেঘনা সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ৫২ কোটি, এস. আলম স্টীল লিমিটেড ৬০ কোটি টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড ৩৫ কোটি টাকা, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড ১৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড ৯০ লাখ টাকা, ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড ৭০ লাখ টাকা, ইউনিক গ্রুপের মালিক নূর আলী ৬৫ লাখ টাকা এবং দি কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড ও বারাউরা টি কোম্পানি লিমিটেড ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
এসব রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই টাকা তিনমাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টের দেওয়া এ রায় স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদন করলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন করতে বলা হয়।
এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে আপিল করার অনুমতি দেন। এরপর আপিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার ওপর শুনানি শেষে গতকাল রায় দিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু