সীতাকু-ে জঙ্গি আস্তানায় যৌথবাহিনীর অভিযানে আত্মঘাতী নারীসহ নিহত ৪
আজাদ হোসেন সুমন ও মো. শহিদুল ইসলাম,চট্টগ্রাম: সীতাকু-ে জঙ্গি আস্তানায় যৌথবাহিনীর ‘অপারেশন অ্যাসল্ট ১৬’-এর অভিযান শেষে ৪ জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে একজন নারী ও তিনজন পুরুষ জঙ্গি রয়েছে এবং এর মধ্যে দুজন গ্রেনেড বিস্ফোরণে আত্মঘাতী হন। তাদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। অভিযানে সোয়াত টিমের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রামে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সীতাকু- পৌরসভার নামারবাজার এলাকার চৌধুরীপাড়ার ছায়ানীড় ভবনে অভিযান শুরু করে সোয়াত, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, র্যাব ও পুলিশের সম্বন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ভোর সোয়া ৬টা থেকে সোয়া এক ঘণ্টার অভিযান চালানো হয় বলে জানান ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে সোয়াত টিমের সদস্যরা পাশের ভবন থেকে ছায়ানীড়ের ছাদে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় জঙ্গিরা দোতলায় উঠে ‘আল্লাহু আকবর’ আওয়াজ তুলে হামলা চালায়। তাদের গ্রেনেড হামলায় সোয়াতের ২ সদস্য আহত হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মুহুর্মুহু গুলি ছুড়ে জঙ্গিদের লক্ষ্য করে। এতে এক জঙ্গি গুলিবিদ্ধ হয়। আরেকজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে আরও দুজন নিহত হয়। দুজনের মরদেহ পুরোপুরি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, ফলে তাদের চেনাই যাচ্ছে না। সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া ‘অপারেশন অ্যাসল্ট ১৬’-এর প্রায় ৫ ঘণ্টা অভিযানের পর ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গি আস্তানায় বুধবার থেকে আটকাপড়া ৫ পরিবারের ২০ জন নারী পুরুষ শিশুকে নিরাপদে উদ্ধার করতে পেরেছেন যৌথবাহিনী। অভিযানের শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি জানান, জঙ্গিদের আস্তানায় জিম্মি হয়ে পড়া ২০ জনকে অভিযানকারী বাহিনী নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে অভিযানকালে ২ সোয়াত সদস্যসহ ৪ পুলিশ আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আটকাপড়া ছায়ানীড় ভবনের বাসিন্দাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিআইজি জানান, অভিযান শুরুর সময় সকালে জঙ্গিরা নিজেরাই শক্তিশালী গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায়। এর পরপরই সোয়াত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী যৌথভাবে অপারেশন শুরু করে। তিনি বলেন, যেহেতু ১৬ মার্চে এই অভিযান চালানো হয়েছে তাই এ অপারেশনের নামকরণ করা হয়েছে ‘অ্যসেল্ড-১৬’। অভিযানকালে জঙ্গিরা মারা যাওয়ার বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই ভবনের বিভিন্ন বাসায় আটকাপড়া ৫ পরিবারের সদস্যদের বের করে আনা হয়েছে। তবে তাদের বের করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় জানালার গ্রিল কেটে, পিছনের দরজা ভেঙে এবং বেলকনি দিয়ে। ডিআইজি শফিকুল ইসলাম আরও জানান, জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হওয়া নারী ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। অভিযানস্থলে উপস্থিত পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ঢাকার অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, সফলভাবে অভিযান শেষ করা হয়েছে। আমরা অনেক ভেবে চিন্তে এবং ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে অভিযান পরিচালনা করি। তাই জঙ্গি সদস্য ছাড়া সাধারণ কোনো লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরে সীতাকু- সদরের নামার বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গির আস্তানা আবিষ্কার করে বাড়ির মালিকরা। স্বামী-স্ত্রী দুই জঙ্গিকে আটক করে তারা পুলিশকে খবর পাঠালে পুলিশ সাধন কুঠির নামে বাড়িটি ঘিরে ফেলে স্বামী-স্ত্রী দুই জঙ্গিকে আটক করে ৪ মাস বয়সী এক শিশুসহ এবং সেখান থেকে বিপুল গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে। আটক দুজনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সীতাকু- ডিগ্রি কলেজের পিছনে প্রেমতলা চৌধুরীপাড়ার ছাড়ানীড় নামে অপর একটি ভবনে জঙ্গির আস্তানা খুঁজে পায়। সেখানে অভিযান চালাতে গেলে বাসার ভিতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে সীতাকু- থানার ওসি তদন্তসহ ২ জন আহত হয়। এর পরপরই পুলিশ অভিযানে পিছু হটে। পরে রাতে চট্টগ্রাম থেকে সোয়াত টিম, বোমা বিষেশজ্ঞ টিম ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ঢাকা থেকে আসেন সোয়াতের আরেকটি টিম।
এ ব্যাপারে আইজিপি শহীদুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা বড় ধরনের নাশকতা পরিচালনা করার লক্ষ্যে দুটো আস্তানা গেড়েছিল। কিন্তু তার আগেই সে সংবাদ পেয়েছে এবং আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো অপারেশনের পান থেকে চুন খসলেই ২০টি নিরীহপ্রাণ ঝরে যেতে পারতো। কিন্তু পুলিশবাহিনীর দৃঢ়তায় ওই ২০ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও সোয়াত টিমকে ধন্যবাদ জানান। সম্পাদনা: তরিকুল ইসলাম সুমন