বিদেশিদের ওপর হামলার টার্গেট জঙ্গিদের গোয়েন্দারা সতর্ক ছিল : ডিআইজি
আজাদ হোসেন সুমন ও মো. শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সন্ধান পাওয়া জঙ্গি আন্তানা দুটি নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্র সংগঠন জেএমবির বলে জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম। জঙ্গিরা যতই তৎপরতা চালাক তারা সুবিধা করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন ডিআইজি। তিনি বলেন, জঙ্গিরা বড় ধরণের নাশকতার টার্গেট নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মধ্যেভর্তি স্থান সীতাকু- পৌরসভায় আস্তানা গড়ে তোলেন এবং প্রচুর গ্রেনেড ও বিস্ফোরক মজুদ করেছিল। বিদেশিদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে মিরসরাই-সীতাকু- অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করাই প্রধান লক্ষ্য ছিল জেএমবির। তবে তাদের সেই মিশন ভেস্তে গেছে কারণ জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে সতর্কতায় রাখা হয়েছিল। তারা জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছিল বলে দাবি করেন ডিআইজি সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সীতাকু-ের চৌধুরী পাড়ার জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টানা ২০ ঘন্টার অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এমন তথ্য দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি। ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নিশ্চিত এরা নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্র সংগঠন ‘নব্য জেএমবি’। এখানকার দুটিই নব্য জেএমবির আস্তানা গড়ে ওঠে। নব্য জেএমবির লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, মিরসরাই-সীতাকু- অঞ্চলে বিদেশিদের ওপর হামলা করে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করা। এছাড়া এই স্থানকে তারা নিরাপদ ভেবে আস্তানা গড়া পরিকল্পনা করেন। তাই তারা সীতাকু- পৌরসভার লামারবাজার আমিরাবাদের সাধন কুটির ও ছায়ানীড় ভবনের বাসা ভাড়া নেন। তিনি জানান, এদের মধ্যে একটি আস্তানা থেকে আটক হওয়া নারী-পুরুষ জেএমবির সদস্য বলেও তিনি জানিয়েছেন। আটকের পর দুজনের কাছ থেকে তারা জেএমবির সদস্য বলে তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ডিআইজি। জানতে চাইলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, আস্তানা দুটি জেএমবির এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। উল্লেখ্য, বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে সীতাকু- পৌরসভার লামারবাজার আমিরাবাদের সাধন কুটির থেকে শিশুসহ জঙ্গি দম্পতি গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিতিত্তে বুধবার বিকেলে চৌধুরীপাড়ার ছায়ানীড় ভবনের নিচতলার একটি বাসায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। অভিযানে পুলিশকে লক্ষ্য করে ভেতর থেকে জঙ্গিরা হ্যান্ডগ্রেনেড ছোঁড়ে। এসময় দুই সোয়াট সদস্য আহত হন। এর পর বৃহস্পতিবার সকালে অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ এর অভিযান চালিয়ে জিম্মি একটি পরিবারের ৫ সদস্যসহ মোট ২০ জনকে উদ্ধার করে এবং অভিযানে এক নারীসহ চারজন নিহত হন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৫ দিন আগে জঙ্গিরা ছায়ানীড় ভবনের নিচতলার বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। ওই ভবনে আরও কয়েকটি পরিবার ভাড়া থাকে। গত ৭ মার্চ কুমিল্লায় দুই জঙ্গিকে আটক করার পর তাদের একজনকে নিয়ে ওই রাতেই মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২৯টি হাতবোমা, নয়টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট বিয়ারিংয়ের বল এবং ৪০টি বিস্ফোরক জেল। এরপর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ দেওয়ার নির্দেশনার কথা জানান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।
এ ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইলফোনে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি সফিকুল ইসলাম বলেন, ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর সারাদেশে জঙ্গিদের ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে। আমাদের ধারণা ছিল। ঢাকায় তারা পুলিশের অব্যাহত অভিযানে টিকতে না পেরে বিভিন্ন জেলা শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে আশ্রয় নিবে। আইজিপি মহোদয় আমাদের সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে চট্টগ্রাম রেঞ্জ সকল জেলায় জঙ্গিবিরোধী পুলিশী অভিযানের পাশপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও অব্যাহত ছিল। তিনি আরো বলেন, ২০জন জিম্মিকে আমরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি এটা একটা উল্লেখ করার মত বিষয়। তিনি বলেন, জঙ্গিরা যতই তৎপরতা চালাক তারা আর সুবিধা করতে পারবে না। কারণ সর্বত্র সোর্স নিয়োগ করা আছে- যেখানেই তারা অবস্থান নিবে আমরা সংবাদ পেয়ে যাব। সম্পাদনা: রাশিদ