প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে চুক্তি : ওবায়দুল কাদের
আল হেলাল শুভ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী ভারত সফরে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে যে কোনো চুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে সামরিক, বেসামরিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক চুক্তি হতে পারে। আমেরিকা ও রাশিয়ার সঙ্গে অনেক দেশের সামরিক চুক্তি আছে। গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি আছে। এটা নিয়ে ‘গেল রে গেল’, ইন্ডিয়া হয়ে গেল, এমন অপপ্রচার ও ভারতভীতি থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির ১৪তম জাতীয় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবন প্রাঙ্গণে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী ৭ এপ্রিল চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সফরে বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে তিস্তা ও নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে। সরকার এ বিষয়ে কিছু না জানালেও বিএনপি নেতারা এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে কোনো চুক্তি হলে মানবেন না তারা। কথিত এই চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির এমন মনোভাবের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারত আমাদের জন্য সংবেদনশীল। ভারত ইস্যু আসলেই আমাদের দেশের একটা মহল গেল রে, গেল বলে চিৎকার শুরু করে দেয়। বলে সব ভারত হয়ে গেল। যার বাস্তবের সাথে কোনো সঙ্গতি নেই। তারা আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। তাদের সাথে আমাদের সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব হবে। এতে কেউ বড়, কেউ ছোট নয়।
কোনো চুক্তিই গোপন থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের কাছে কোনো তথ্য গোপন রাখা আমরা সমীচিন মনে করি না। তথ্যপ্রবাহের বিস্ফোরণে কোনো কিছুই গোপন থাকে না। গোপন করার তো আমাদের দরকার নেই। সামরিক হোক, অসামরিক হোক যে কোনো চুক্তি জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে করতে আপত্তি কোথায়?
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিলে মাথা উঁচু করে বীরের বেশে ভারত যাবেন। সেখানে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে যে চুক্তি জনগণের জন্য প্রয়োজন, সেটাই করবেন। এটা তো একতরফা বিষয় নয়, উভয় পক্ষের সম্মতি লাগে।
ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব অমীমাংসিত নানা সমস্যার সমাধান হয়েছে সেগুলোরও উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার স্বাধীনচেতা নেতৃত্বের কারণে ৪১ বছর পর ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। দেশের মানচিত্রে ১০ হাজার একর জমি যুক্ত হয়েছে। যাতে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন হয়নি।
১৯৭২ সালে ভারতের সঙ্গে করা ২৫ বছরমেয়াদী নিরাপত্তা চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এই চুক্তিকে গোলামি চুক্তি বলে আসছিল। তবে ৯ বছর ক্ষমতায় থাকলেও তারা এই চুক্তি বাতিল করেনি।
প্রকৌশলীদের উদ্দেশ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি, আপনারা সারা দেশের দখল হওয়া রাস্তাগুলো উদ্ধার করবেন। এ ছাড়া এলাকার উন্নয়ন কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন। এখনো কোনো মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করবেন না। আমি এটা সহ্য করব না। জনগণের কাছে যে কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই আগে করবেন।
সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি আবদুন নুমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, ইনস্টিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি এ কে এম এ হামিদ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুন্তাসির হাফিজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : রাশিদ