চাঁদাবাজ ও পোস্টারবাজদের প্রতিরোধ সম্ভব কিভাবে?
রবিউল আলম
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সমাজ ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করাও যেমন রাজনীতি ছাড়া হয় না, তেমনি সমাজের নিরীহ মানুষদের জাগিয়ে তুলতে হাতিয়ার ছাড়া হয় না। সমাজে কিছু সমাজবিরোধী মানুষেরও বসবাস আছে, যাদেরকে অর্থলোভী ও নরপিশাচ বলে ডাকা হয়। মাদক, চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, দখলবাজী, নারী ব্যবসা এমন কোনো কাজ নেই যা তারা করেন না, আর এই অসামাজিক কাজগুলো করতে তারা জোটবদ্ধ হয় এবং তখন তাদের প্রশাসনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। প্রশাসনকে ভুল পথে চালানোর জন্য কিছু বড় বড় নেতার ছবি দিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন করে জাহির করতে হয় তারা ক্ষমতাসীন দলের হর্তাকর্তা। ছবির রাজনীতি নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে, যাদের ছবি ব্যবহার করে কর্তা হয়ে সমাজকে জিম্মি করেছেন, সবার কথা জানি না, তবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. সাদেক খান ছবি ব্যবহারকারী মাদক সম্রাটদের চিহ্নিহ্নত করে এলাকায় সাড়াশি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন, যা এখনো চলছে। ইতোমধ্যে কিছু সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে, কিছু আত্মগোপনে রয়েছে। ‘রাজনীতি করি সমাজ ও দেশের উন্নয়নের জন্য। দলের সুনাম রক্ষা করতে না পারলে, মানুষের কাছে ভোট চাইব কি করে, শান্তি ও সুখে থাকতে চাইলে রাজনীতি করার প্রয়োজন কী? রবিউল, একটা কিছু করো। উপরের উল্লেখিত কথাগুলো সাদেক খানের।
একটু লজ্জা পেলাম মনে মনে। মাত্র দুইদিন আগে আমাদের অর্থনীতির নির্বাহী সম্পাদক বিশ্বজিত দা ফোন করে বলেছিলেন, রবিউল ভাই রায়ের বাজারে নাকি সন্ত্রাসীদের দা-ছুরি নিয়ে হামলা হয়েছে, কি বিষয়, একটু খোঁজ-খবর রাখুন। নিজের এলাকায় হওয়ায় আরও লজ্জিত হলাম। দাদা একজন রিপোর্টার পাঠালেন। নিজের নাম গোপন করে কিছু তথ্য দেওয়া হলো। পরদিন আমাদের অর্থনীতি পত্রিকায় খবরের পুরো অংশ ও বিষয় আমার নামে, আমি তথ্যদাতা। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ অফিসে শতশত মানুষের আগমন। রায়েরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি সচল, হাজারীবাগ থানার টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিজের অজান্তে এত বড় একটি কাজ করে ফেলেছি ভাবতেই ভালো লাগছে। একটু ভয়ও হচ্ছে এই ভেবে যে, শত সন্ত্রাসীদের কাজে বাধা হলাম, না জানি কি হয়।
আমার ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক জনাব সিদ্দিকুর রহমান ভূইয়া, কাউন্সিলর আবু তাহের খান ও ব্যবসায়ী সমাজের নুরুল ইসলাম ভাইসহ আমার পাশে দাঁড়ালেন। সংগঠনের সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের জন্য, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধের জন্য এলাকার সর্বস্তরের মানুষ লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে এলো। জনতার শক্তির কাছে পারমাণবিক বোমাও যে অচল তা প্রত্যক্ষ করলাম রায়ের বাজারে। দুদিনের জন্য কলম ছেড়ে লাঠি হাতে নিয়েছিলামÑ মনে হচ্ছিল ’৭১-এর উত্তাল দিনগুলোর কথা।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি বাঁশের লাঠি হাতে ৭ মার্চের সমাবেশে হাজির হয়েছিল, শেখ হাসিনার ডাকে মেয়র হানিফ এর নেতৃত্বে আলহাজ্ব সাদেক খানের ব্যবস্থাপনায় জনতার মঞ্চে হাজির হয়েছিলাম। লগি, বৈঠা নিয়ে বাংলার মানুষকে রক্ষা করতে, ভোটের অধিকার আদায়ে, বিএনপি-জামায়াতের আক্রমণ থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের রক্ষা করতে বৈঠা হাতে কর্মসূচি পালন করেছিলাম জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে। কদিন আগে মাংস ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট পালন হয়েছে, ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর নিয়ে জটিলতা, মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে সহায়তা, মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে অজানা কিছু তথ্য দেওয়াÑ এ সকল কাজ করতে হয়েছে। আমার জীবন তো এমনিতেই বিষিয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচারের প্রতিবন্ধকতা ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে রাজপথে চাপাতি মিছিল করার অপরাধে অসংখ্য মিথ্যে মামলার আসামি করা হয়েছিল, ভেবেছিলাম এর চেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু কি আর হবে, মানুষ তো একবারই মরে। গুটিকয়েক সন্ত্রাসী এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে, জনজীবন অতিষ্ঠ করছে, দলের নামে এমপি, মেয়র ও কাউন্সিলরদের ছবি দিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন করে পুলিশকে ভয় দেখাচ্ছে, এ অবস্থা চলতে পারে না, চলতে দেওয়াও যায় না।
২০১৯ সালের নির্বাচনে মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে। কে নমিনেশন পাবে জানি না, তবু মানুষের কাছে থাকার দায়িত্ব পালন করতে হবে। সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করার মতো ভালো কাজের সুযোগ আর হয়তো পাব না, তাই লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। হাজার হাজার মানুষ আজ আমার পাশে, আমার দলের সঙ্গে, সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে কি যে আনন্দ, লিখে বোঝানো যাবে না! ১৯৭১-এর রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পেটাতে এ রকম আনন্দ লেগেছিল।
বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের আওয়ামী লীগ কর্মীদের কাছে আলহাজ্ব মো. সাদেক খানের একটি বার্তা দিতে চাই, আমি কি হব তা দেখবে দল, মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে রাজনীতি করি, তাই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে নেতা হয়ে কি হবে? ভাবতে হবে, গুটিকয়েক সন্ত্রাসীর সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব পালনের নাম রাজনীতি। সরকার হুকুম দিয়েছেÑ সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে, সমাজ ছাড়া করতে হবে চাঁদাবাজ, দখলবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীদের, ওদের ক্ষমা নেই। প্রশাসন তোমাদের সঙ্গে আছে এবং থাকবে, তোমাদের কোনো ভয় নেই। এত বড় মনের মানুষ, এত বড় একজন নেতার হুকুম কি বিফলে যাবে। আজ রায়ের বাজার ৩৪নং ওয়ার্ড সন্ত্রাসমুক্ত হতে চলেছে, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প মাদকমুক্ত হয়েছে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে যদি সাদেক খানের মতো একজন নেতা থাকত, দায়িত্ব নিত, টাকার মোহ ত্যাগ করতে পারত, দলের মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করত, তবে কি জাতির জনকের স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনাকে এত পরিশ্রম করতে হতো?
সম্পাদনা: আশিক রহমান